চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই রাশিয়ার গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি ক্যানসারের টিকা ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আলেক্সান্দার গিন্টজবার্গ রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা রিয়া নভোস্তিকে এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসাক্ষেত্রে টিকা ব্যবহারের জন্য ইতোমধ্যেই রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের আবেদন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগস্টের মধ্যেই অনুমোদন পেতে পারে এবং সেপ্টেম্বর থেকে এটি ব্যবহার শুরু করা সম্ভব হবে।
গিন্টজবার্গের বক্তব্য অনুযায়ী, এই টিকা অনুমোদিত হলে এটি হবে বিশ্বের প্রথম ক্যানসারের টিকা। টিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে অত্যাধুনিক এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এমআরএনএ একটি বিশেষ প্রোটিন যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নির্দিষ্ট অসুস্থতার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রশিক্ষণ দেয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি হওয়া টিকা মানবদেহে প্রবেশ করার পর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং ক্ষতিকর ক্যানসার কোষগুলোকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
এই টিকা মূলত তাদের জন্য উপযোগী যাদের শরীরে ইতোমধ্যে ক্যানসারের অস্তিত্ব রয়েছে। বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যানসার নিরাময়ে এটি সবচেয়ে কার্যকর হবে। যদিও মধ্যম পর্যায়ের রোগীরাও এ টিকার মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন বলে গিন্টজবার্গ আশা প্রকাশ করেছেন। সাধারণত ক্যানসারের তিনটি ধাপ রয়েছে— প্রাথমিক, মধ্যম এবং চূড়ান্ত। টিকাটি প্রাথমিক ও মধ্যম পর্যায়ের রোগীদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ৪০ লাখ ক্যানসার রোগী রয়েছেন এবং প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ ২৫ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এই পরিসংখ্যান ক্যানসার নিরাময়ে নতুন টিকার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
গিন্টজবার্গ আরও জানিয়েছেন, চলতি বছরে ক্যানসারের চিকিৎসা নিয়ে আরও কয়েকটি নতুন ওষুধ ও টিকা বাজারে আসতে পারে। কারণ বর্তমানে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। গামালিয়ার নতুন উদ্যোগ ক্যানসারের চিকিৎসাক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। এর আগেও তারা স্পুটনিক ৫ নামে প্রথম করোনা টিকা প্রস্তুত করে সাড়া ফেলেছিল। রাশিয়াসহ বিশ্বের ৫৫টিরও বেশি দেশে করোনা মোকাবিলায় স্পুটনিক ৫ ব্যবহার করা হয়েছে। এবার ক্যানসারের টিকা তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি নতুন এক ইতিহাস গড়ার পথে রয়েছে।
বিশ্বের প্রথম ক্যানসারের টিকা তৈরি এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা যত এগোচ্ছে, ততই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটছে। ক্যানসারের মতো মারণ রোগের চিকিৎসায় এই টিকা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গামালিয়া ইনস্টিটিউটের এই উদ্যোগ শুধু রাশিয়াতেই নয়, বরং গোটা বিশ্বে ক্যানসার নিরাময়ের সম্ভাবনাকে নতুন দিশা দেখাবে বলে প্রত্যাশা।
রাশিয়ার তৈরি ক্যানসারের টিকা নিয়ে এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা চলছে। নতুন এই টিকা চিকিৎসা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদি এটি সফল হয়, তবে ক্যানসারের চিকিৎসায় একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।