বিশ্ববাজারে যেখানে দিন দিন নিত্যপণ্যের দাম কমছে, সেখানে ঠিক উল্টো চিত্র বাংলাদেশে। আবার দাম বৃদ্ধির দৌড়েও আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ। খোদ সরকারি সংস্থা ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে ডাল, চিনি ও রডের দাম কমেছে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এসব পণ্যের দাম না কমে, বরং বেড়েছে ১৩ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি নানা সংকটে সারা বিশ্বেই ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের দাম। আশার কথা, কিছু কিছু পণ্যের দাম কমেছেও। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে যে প্রভাব পড়ে, কমলে তা একেবারেই পাত্তা পায় না বাংলাদেশের বাজারে।
এই যেমন, গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে বেড়েছে ১৩ থেকে ১৯ শতাংশ। প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে গমের দাম। এক কেজি গমের দাম বিশ্ববাজারে মাত্র ৭ শতাংশ বাড়লেও এদেশে ৬৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় সিমেন্টের দামও বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশের বেশি হারে।
এক ব্যবসায়ী বলেন, তখন চিনি ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। এখন প্রায় ৮৮ থেকে ৯০ টাকা কেজি। দুই কেজির আটার প্যাকেট ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা। এখন দুই কেজি আটার দাম ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
দাম বৃদ্ধির দৌড়েই বাংলাদেশ শুধু এগিয়ে নয়, ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে-বিশ্ববাজারে কিছু পণ্যের দাম কমেছে, তবে সেসব পণ্যের দাম এদেশে না কমে বরং আরও বেড়েছে। গেল একবছরে বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমেছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর বাংলাদেশে না কমে বরং বেড়েছে ১৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। বিশ্বে ডালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এদেশে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। রডের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ, অথচ বাংলাদেশে বেড়েছে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ।
এক ব্যবসায়ী বলেন, গত বছর এই মৌসুমে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। আর এ বছর ওই মিনিকেট হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি। ২৮ চাউল আমরা সিজনে বিক্রি করেছি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি। সেই চাল এখন ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
এক ক্রেতা বলেন, বাজার সিন্ডিকেটে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে হবে, সে যে দলেরই হোক না কেন।
ভোক্তা অধিকার সংস্থা ক্যাব বলছে, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের নজরদারি অভাবকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলছেন অসৎ ব্যবসায়ীরা।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, রেগুলেটরি বোর্ডে যারা আছেন, তারা এ বিষয়গুলো দেখভাল করবেন। তাদের যথাযথ নজরদারি বা তদারকির অভাব রয়েছে। যখন ব্যবসায়ীরা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে থাকেন, তারা কিন্তু তখন নীরব হয়ে যান।
তবে দাম না কমার পেছনে ডলারের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দাম যতটুকু কমেছে, আবার ডলারের দাম কত শতাংশ বেড়েছে। এলসি করতে এর চেয়ে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি পেমেন্ট করতে হচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানালেন, অবৈধ কারসাজিকারী বন্ধে তৎপর সংস্থাটি। বাজারে স্বস্তি ফেরাতে ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।