জিয়াউল আহসান, যিনি এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক ছিলেন, তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক সদস্যের উপস্থিতিতে, শুনানির পর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদা বলেন, 'এই আবেদন আইনগতভাবে খারিজ করা হচ্ছে।' আদালতে তার আবেদন খারিজ হওয়ার পর জিয়াউল আহসান এবং তার আইনজীবীরা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ সময়ে, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের পক্ষ থেকে তার আইনজীবী এম আই ফারুকী, নাজনীন নাহার ও নাজিম উদ্দিন তাদের বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এই রায়ের ফলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের ওপর জিয়াউল আহসানের অভিযোগ আর পরিপূর্ণভাবে বিবেচিত হবে না। বিচারপতিরা নির্ধারণ করেছেন যে, এই মামলায় ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার অব্যাহত থাকবে এবং বিষয়টি তাদের দ্বারা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য এগিয়ে যাবে।
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায়টি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক আদালতের স্বীকৃতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন যে, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমের মাধ্যমে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী আন্দোলন চলাকালীন গণহত্যার অভিযোগ তোলা হয়। এর পরই সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান তার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে এ বিষয়ে আবেদন করেছিলেন, যাতে ট্রাইব্যুনালের বিচার ও এখতিয়ার নিয়ে আলোচনা উঠে আসে।
এছাড়া, মামলার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা জানান, সাবেক সেনা কর্মকর্তার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর, বিষয়টি আরও গভীরভাবে তদন্ত করা হতে পারে। তাদের মতে, আইনগতভাবে বিষয়টির গুরুত্ব না কমে বরং বাড়বে, এবং সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনাল সক্রিয় থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আদালত বা ট্রাইব্যুনালের বিচারিক ক্ষমতা বিষয়ে এমন বিতর্ক ভবিষ্যতে অনেক বেশি গুরুত্ব পাবে, বিশেষত গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত মামলা সামনে এলে।
এই রায়ের পর, বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে জনমনে আরও আলোচনা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরে এই বিষয়টি নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ধারণ করবে।
এছাড়া, আগামীতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে কী ধরনের আইনগত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আরও আলোচনা হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন রায় গণহত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচারব্যবস্থা নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলবে, এবং এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার কার্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
এদিকে, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন, তবে আপিলের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করবে আদালতের সিদ্ধান্তের উপর।
এতসবের মধ্যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত দেশের বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।