‘চাঁদের মতো ফুটফুটে একটা শিশু। তার তো কোন শত্রু থাকার কথা না। ঈদের জামা কাপড় কিনে দিয়েছি। তার পরে আমার নাতনিটারে কসমেটিকস দেয়ার নামে ডেকে নিয়ে মেরে ফেলেছে ওর সৎ মা। খুনির সঙ্গে দেখা হলে তাকে জিজ্ঞাসা করব; আমার নিষ্পাপ নাতনিডারে কেন এভাবে মারলো। সে তো কোনো দোষ করে নাই’- এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ডোবা থেকে উদ্ধার হওয়া শিশু জোনাকি খাতুনের (১২) নানা সুরুজ মিয়া।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) বেলা ১২ টার দিকে যশোর শহরের রেলস্টেশনসহ মডেল মসজিদের পেছন থেকে একটি ডোবা পুকুর থেকে জোনাকির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে সোমবার (১ এপ্রিল) সকাল ১০ টার দিকে নিখোঁজ হন জোনাকি। নিখোঁজের পর ওইদিন রাতেই যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন পরিবার।
জোনাকি রেলস্টেশন এলাকার ইজিবাইক চালক শাহীন তরফদারের মেয়ে। সে তার বড়ভাই ও বোনের সঙ্গে বেনাপোল পোড়াবাড়ি গ্রামে নানা বাড়িতে থাকতেন।
সুরুজ মিয়া বলেন, ‘জোনাকির বাবা শাহীন তার মা কোহিনুরকে রেখে শহরের রেলগেট এলাকায় নার্গিস বেগম নামে আরেকজনকে বিয়ে করে। শাহীন-কোহিনুরের সংসারে জোনাকি ছাড়াও তার আরও দুই ভাই বোন রয়েছে। শাহীন অন্য জায়গায় বিয়ে করায় কোহিনুর তার তিন সন্তানকে আমার কাছে রেখে সে তুরস্কে পাড়ি জমায়। এরপর তারা তিন ভাইবোন আমার কাছেই মানুষ হয়। মাঝে মধ্যে আমার নাতিরা রেলগেট এলাকায় তার বাবা ও সৎ মায়ের কাছে বেড়াতে যেতো। গত শুক্রবার জোনাকিকে কসমেটিক কিনে দেয়ার কথা বলে তার সৎ মা নার্গিস যশোরে বাসায় বেড়াতে নিয়ে যায়। পরে মঙ্গলবার দুপুরে তার বাবার বাসার পাশে পরিত্যক্ত পুকুর থেকে জোনাকির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘নিষ্পাপ শিশুকে কি জন্য মারলে, কি ক্ষতি করেছে। ছোট থেকে বড় করেছি। আমি তার লাশ দেখে সহ্য করতে পারছি না। এতো ক্ষতি কেন করলো। ঈদে জামাকাপড় চেয়েছে; তার পছন্দ মতো জামা দিয়েছি। পাঁচ দিন আগে ওর সৎ মা কসমেটিকস দেয়ার কথা বলে যশোর নিয়ে যায়। নিয়ে এসে কসমেটিকস’র জায়গায় কাফনের কাপড় দিল!’
নিহতের বড় ভাই তাহিদুল ইসলাম চয়ন বলেন, ‘সোমবার থেকে জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছে না। সৎ মা আমাদের জানায় পাশেই স্টেশন; সেই স্টেশনে খুলনার ট্রেনে উঠে যেতে পারে। আমরা খুলনাতেও খুঁজেছি। যশোরে থানাতেও জিডি করেছি। এমনকি শহরে মাইকিং করে আমার বোনকে খুঁজেছি। আমার বাবা ও সৎ মা যেখানে থাকে- সেই বাসার পেছনের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে জোনাকির মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়। সৎ মা নার্গিস আমার বোনকে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাই।’
যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘জোনাকি নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার থানায় জিডি করা হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের সৎ মাকে পুলিশি হেফাজতে আনা হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।