রোববার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আযহা অনুষ্ঠিত হলেও কুমিল্লা দেবীদ্বারের নুরপুর গ্রামে মেহেদী হাসান শান্ত’র বাড়িতে ছিল শোকের মাতম। পুত্র শোকে বারবার মুর্ছা যাচ্ছে শান্তর মা। কোরবানির জন্য ক্রয় করা ১২টি গরু ও বেশ কয়েকটি ছাগল কোরবানি করেনি শান্ত’র বাড়ির শোকাহত স্বজনেরা। এলাকায় ছিলোনা কোনো ঈদ আনন্দ।
রোববার বিকালে শান্ত’র নামাজে জানাযা হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে হয়ে উঠে প্রতিবাদ মুখর। হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার চান উপস্থিত মুসল্লিরা। ওই সময় হত্যাকান্ডের হুকুমদাতা হিসেবে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিক’কে জানাযাকালে আলোচনায় অংশ নিতে দেননি মুসল্লীরা।
এ সময় মেহেদী হাসান শান্ত হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মাসুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোসলেহ উদ্দিন সরকার ও নিহত শান্তর চাচা ফিরোজ সরকার প্রমুখ। ওই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল আলম, এডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন শিমুল, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউছার হায়দার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার বিকালে উপজেলার ‘নূরপুর শাহ ফাতেমি ইবতেদায়ী হাফেজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় একটি সভা ছিল। সভার পূর্বে নূরপুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী মোঃ জসীম উদ্দিনের ছেলে সাজিদের সাথে স্থানীয় সাদ্দাম, আল আমিন, সগির ও বায়েজিদের তর্ক হয়। পরে এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে তারা। এলোপাথারি ছুরিকাঘাতে শান্তসহ ৫জন আহত হয়। শান্তসহ অপর ৪জনকে দ্রুত দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করে।
এ বিষয়ে রাতেই শান্ত’র বাবা জাকির হোসেন সরকার বাদী হয়ে আল আমিন ও সাদ্দামসহ ২৬ জনকে আসামী করে দেবীদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার অভিযুক্ত আসামী সাদ্দাম ও মোকলেছকে গ্রেফতার করে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী শান্ত’র বাবা জাকির হোসেন সরকার জানান, আমার ছেলের হত্যকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় আবু কাউছার অনিক। গত শুক্রবার মসজিদে প্রকাশ্যে অনিক বলেন গরু কোরবানির সাথে মানুষও কোরবানি করবে। তার একদিন পর আমার ছেলেকে অনিকের অনুসারিরা হত্যা করে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেই শান্ত হয়নি, মামলা তুলে নিতে হুমকী ধমকী দিচ্ছে। ঈদের দিন সকালে মামলা তুলে নিতে আমাকে জোড়পূর্বক দেবীদ্বারে ধরে নিয়ে যায় অনিক।
অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিক জানান, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বিত্তিহীন। মামলা তুলতে নয়! মামলা থেকে একজন আসামীর নাম বাদ দিতে গ্রামে ৭-৮ জনের সিদ্ধান্তের কারনে বাদীকে নিয়ে থানায় যাই। কিন্তু তিনি থানায় গিয়ে উল্টে যায়। সুষ্ঠভাবে তদন্তের মাধ্যমে শান্ত হত্যার বিচার হউক আমিও চাই।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, নিহত শান্ত’র বাবা বাদী হয়ে ৬ জনের নামীয় এবং আরো অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে। রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহার ভুক্ত আসামী সাদ্দাম ও মোকলেছ’কে গ্রেফতার পূর্বক রোববার কোর্টে প্রেরন করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।