ফরিদপুরে নির্ধারিত খাজনার তিনগুন আদায়ের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আবু সাঈদ খন্দকার, জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শুক্রবার ৪ঠা মার্চ ২০২২ ০৫:৩৪ অপরাহ্ন
ফরিদপুরে নির্ধারিত খাজনার তিনগুন আদায়ের অভিযোগ

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর হাটে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে তিন গুণ বেশি অর্থ আদায় করা হচ্ছে এই হাটে। 


ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হাটে মালামাল নিয়ে আসা গাড়িপ্রতি ২০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। চাঁদা না দিলে গাড়ি আটকিয়ে রাখে। এছাড়া আমদানি-রফতানি খাজনার অজুহাতে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে দুই দফা খাজনা আদায় করা হয়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাট বিমুখ হচ্ছেন এলাকাবাসী।



খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর হাটে প্রায় এক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই হাটে কোথাও খাজনার তালিকা টানানো হয়নি। মূল ইজারাদার প্রতিটি পণ্যের বাজার পৃথকভাবে সাব-লিজ দিয়েছেন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। লিজ নেওয়া ব্যক্তিরা পৃথক পৃথক মালামালের খাজনা আদায়ে লোক নিয়োগ দিয়েছেন। তারা সরকারি নীতিমালা না মেনে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করছেন।



হাটে পেঁয়াজ, রসুন, আলু ও মরিচ কুইন্টাল প্রতি সরকার নির্ধারিত খাজনা ১৬ টাকা হলেও, আদায় করা হচ্ছে ৬০ টাকা। ধানের চারা বস্তাপ্রতি ১০ টাকার জায়গায় নেওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। সবজির ক্ষেত্রে নির্ধারিত খাজনা কুইন্টাল প্রতি ৮ টাকা। কিন্তু একটি লাউ বিক্রি করতে হলেও দিতে হচ্ছে ১০ টাকা। বরই বিক্রি করতে প্রতিজনকে দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা, খেজুরের গুড় বিক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ১৫০ টাকা, পশুর হাটে মুরগিতে শতকরা ১০ টাকা, ছাগলের ক্ষেত্রে হাজার প্রতি ১০০ টাকা, গরুতে হাজারে ৫০ টাকা, ফুটপাতের দোকানে শুধু চট বিছানোর জন্য ২০ টাকা। এছাড়া পৃথকভাবে অন্যান্য মালামালের খাজনা আদায় করা হচ্ছে।


হাটে আসা কে এম ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আব্দুল আলী বলেন, ‘দুই বস্তা ধানের চারা কিনে নগদ ১০০ টাকা খাজনা দিয়েছি। যে কৃষক চারা বিক্রি করেছেন তার কাছ থেকেও আরেক দফায় খাজনা নেওয়া হয়েছে।’ সাধু সরকার নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘গুড়ের দোকান পাতার সঙ্গে সঙ্গে হাট মালিকের লোকজন এসে ১৫০ টাকা খাজনা নিয়ে গেছে।’ ভাঙ্গা উপজেলা থেকে শস্যপণ্য নিয়ে আসা ট্রাকচালক আশরাফ হোসেন বলেন, ‘হাটে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। শস্যের জন্য খাজনা তো দিয়েছিই, সঙ্গে গাড়ির জন্য ২০০ টাকা নিয়েছে।’


চরভদ্রাসন বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন মোল্লা বলেন, স্থানীয় হাট ইজারাদাররা প্রভাবশালী। তাই অনেকেই প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। দীর্ঘদিন ধরে এই হাটে আতিরিক্ত খাজনা আদায়সহ গাড়িতে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।


হাট ইজারাদার আসলাম মোল্লা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে যে হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছিল, আমি তার বেশি আদায় করিনি। ইজারা নেওয়ার পর বিভিন্ন মালামাল হাট সাব-লিজ দিয়েছি, তাই অতিরিক্ত খাজনা আদায় বা গাড়িপ্রতি চাঁদা আদায়ের বিষয়গুলো আমার জানা নেই।’


এদিকে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি হাট পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোতালেব হোসেন মোল্লা।


মোতালেব হোসেন মোল্লা জানান, ক্রেতা-বিক্রেতাকে সরকার নির্ধারিত খাজনার বেশি অর্থ দিতে নিষেধ করা হয়েছে।


তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, তিন দিনের মধ্যে হাটে খাজনা আদায়ের তালিকা টানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী হাট থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে খাজনা আদায় করা হলে ইজারা বাতিল করা হবে। গাড়িতে চাঁদাবাজিসহ কোনও অনিয়ম সহ্য করা হবে না। নির্দেশ না মানলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।