বরগুনায় মাদ্রাসাছাত্রের হাত ভেঙে আটকে রাখলেন শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি , বরগুনা
প্রকাশিত: সোমবার ১৩ই ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
বরগুনায় মাদ্রাসাছাত্রের হাত ভেঙে আটকে রাখলেন শিক্ষক

বরগুনায় আবদুল্লাহ (৬) নামে এক নুরানী শাখার ছাত্রকে পড়া না পারায় মাদরাসা শিক্ষক পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে। আমতলী পৌরসভার একে হাইস্কুল সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত দারুল আরকাম মডেল মাদরাসায়  এই ঘটনা ঘটে। এছাড়াও কোনো চিকিৎসা না দিয়ে ৪দিন ধরে মাদরাসায় আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।


উপজেলার চাওরা ইউনিয়নের চাওরা চালিতাবুনিয়া গ্রামের হারুন হাওলাদারের ছেলে মো. আবদুল্লাহ (৬) কে আমতলী পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের একে হাইস্কুল সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত দারুল আরকাম মডেল মাদরাসার নুরানী অবাসিক শাখায় ভর্তি করেন। 


জানা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বিকেলে মাদরাসার নুরানী শাখার ক্লাশ নেন মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবু আক্কাস আলী। ক্লাশে পড়া না পারায় সে ছাত্র আবদুল্লাকে প্রথমে লাঠি দিয়ে পেটান। লাঠি দিয়ে পেটানোর সময় আবদুল্লাহ চিৎকার দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে মাদরাসা শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবু আক্কাস আলী আবদুল্লার বাম হাতের কনুইয়ে ডাষ্টার দিয়ে আঘাত করেন। এতে তার বাম হাতের জোড়া ছুটে যায়।


এ অবস্থায় আবদুল্লাকে কোন চিকিৎসা না দিয়ে এবং অভিভাবকে না জানিয়ে ওই মাদরাসার শিক্ষক চারদিন ধরে মাদরাসার একটি কক্ষে আটকে রাখেন। প্রচন্ড যন্ত্রনায় চারদিন ধরে আবদুল্লাহ কাতরালেও শিক্ষক তার কোনো চিকিসা এবং খোঁজ নেননি। এ অবস্থায় সোমবার সকালে আবদুল্লাহর মা মাদরাসায় তার ছেলে আবদুল্লাকে দেখতে আসলে ছেলেটি কান্না শুরু করে।


মা তখন নিরুপায় হয়ে মাদরাসা থেকে তার ছেলেকে উদ্ধার করে আমতলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে তার হাতের এক্সরে করে দেখা যায় বাম হাতের জোড়া সরে গেছে।


শিশু আবদুল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পড়া না পারায় হুজুর আমাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিছে। এরপর আমাকে কোন ওষুধ দেয় নাই। বাড়িতেও যেতে দেয়নি।


আবদুল্লার মা পারুল বেগম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবু আক্কাস আলী পড়া না পারায় আমার ছেলের পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে। এমনকি হাত ভেঙে ৪ দিন ধরে মাদরাসা আটকে রেখেছে। এসময় সে ছেলেটির কোন চিকিৎসা করাননি। সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে ছেলেকে মাদরাসায় দেখতে এসে আমি এ ঘটনা জানতে পারি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে এক্সরে করে দেখা যায় তার হাতের জোড়া ছুটে গেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। মাদরাসা শিক্ষক এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেছে।


হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল টেনোলজিষ্ট মো. মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, প্রচন্ড আঘাতের কারণে ছেলেটির বাম হাতের জয়েন্ট সরে গেছে। হাতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে।


আমতলী থানার ওসি তদন্ত রনজিৎ সরকার বলেন, হাত ভাঙা বাচ্চাসহ পারুল নামে একজন মহিলা থানায় এসেছিল। মৌখিকভাবে সে মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার ছেলের হাত পিটিয়ে ভাঙার বিষয়ে জানিয়েছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।