বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের নাচনাপাড়া হাট থেকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিয়মিত খাজনা আদায় করেছেন মেসার্স ফারিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফয়সাল আহমেদ। তিনি গত পাঁচ মাসে প্রায় কোটি টাকা অবৈধভাবে আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। অভিযোগের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার বরগুনা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ গিয়ে হাট সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাজনা আদায় বন্ধ করে দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাথরঘাটা উপজেলায় ২৯টি হাট ইজারা দেয়া আছে। এর মধ্যে নাচনাপাড়া হাটটি সবচেয়ে বড় এবং এখন থেকে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। এই হাট থেকে প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুই হাটে কয়েক লাখ টাকা খাজনা আদায় হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি ১৪২৮ বাংলা সনে হাটটি ৫৭ লাখ ১০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হন আওয়ামী লীগ নেতা ফয়সাল আহমেদ। এতে জামানতসহ ইজারামূল্য দাঁড়ায় ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু ইজারামূল্যের বিপরীতে পে-অর্ডার ও জমা স্লিপের মাধ্যমে তিনি ২৫ লাখ টাকা জমা দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওনা অপর ৩৪ লাখ ৯৫ লাখ ৫০০ টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নির্ধারিত নিয়মে তাঁর ইজারা বাতিল হয়। একই সঙ্গে তাঁর জমা দেওয়া ২৫ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। এ ঘটনায় ফয়সাল আহমেদ বাদী হয়ে গত ২৯ মার্চ বরগুনা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই দিনই আদালত ইজারার সব কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু আদালতের ওই স্থগিতাদেশ অমান্য করে ফয়সাল আহমেদ ও তাঁর লোকজন নিয়মিত নাচনাপাড়া হাটের খাজনা আদায় করে আসছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে শুধু গরুর বাজার থেকেই অন্তত তিন লাখ টাকা খাজনা আদায় করা হয়। সেই হিসাবে, মাসে খাজনা আদায় দাঁড়ায় ১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া উপজেলার সর্ববৃহৎ কোরবানির পশুর হাট ঘিরে গত এক মাসে কয়েক গুণ বেশি খাজনা আদায় করা হয়েছে। শুধু কোরবানির পশুর হাট ঘিরে এক মাসে প্রতি হাটে অন্তত সাড়ে ৫ লাখ টাকা খাজনা আদায় হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন। সেই হিসাবে, এক মাসে গরুর হাট থেকে আদায় হয়েছে ৪৪ লাখ টাকা। এছাড়াও ওই হাটের মাছবাজার, তরকারি, হাঁস-মুরগি-কবুতর, ধান, পান ও ফলের বাজার থেকে প্রতি হাটে অন্তত ১৫ হাজার টাকা খাজনা আদায় করা হয় বলে জানান ওই হাটের সাবেক একাধিক ইজারাদার। এতে সব মিলিয়ে ফয়সাল আহমেদ চলতি ১৪২৮ সনের গত পাঁচ মাসে ইজারা না নিয়েও অবৈধভাবে প্রায় কোটি টাকা আদায় করেছেন। তার বিপরীতে সরকারি কোষাগারে কোনো টাকা জমা পড়েনি।
এবিষয়ে ফয়সাল আহমেদ জানান, মামলার কারণে টাকা জমা দিতে পারছি না। আগামী তারিখে মামলাটির একটি ফয়সালার সম্ভাবনা রয়েছে। ফয়সালা হলেই টাকা জমা দিয়ে দেব। এছাড়াও তিনি জানান গত মঙ্গলবার বরগুনা থেকে ম্যাজিস্ট্রেট স্যার এসেছিলেন। আসার পর থেকে খাজনা আদায় বন্ধ রেখেছি।
এবিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ জানান, ওই হাট ইজারা দেওয়া হয়নি। প্রভাব খাটিয়ে ফয়সাল আহমেদ ও তাঁর লোকজন প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে খাজনার নামে টাকা নিচ্ছে।গত মঙ্গলবার ওই হাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ গিয়ে ইজারা আদায় বন্ধ করে দিয়েছে। পরবর্তীতে নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কেহ খাজনা আদায় করতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।