অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির শেষ ম্যাচ আজ
হুট করেই নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে নির্বাচকরা সুযোগ দিলে আরও কিছুদিন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপিয়ে খেলে যাওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়ে দিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। কিন্তু তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের যা অবস্থা, তাতে দলে টিকে থাকা তার জন্য কঠিনই। যদিও দলের অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন মনে করছেন, দেশের ক্রিকেটকে এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে মাশরাফির। নির্বাচক এরপর পৃষ্ঠা হাবিবুলের সুরেই কথা বলেছেন মাশরাফির দীর্ঘ দিনের সতীর্থ মুশফিক-তামিম-মাহমুদউল্লাহরা। সতীর্থরা সঙ্গে এটাও জানিয়েছেন, অধিনায়ক মাশরাফিকে খুব মিস করবেন তারা।
জিম্বাবুয়ে সিরিজটাই অধিনায়ক মাশরাফির শেষ, গুঞ্জনটা সিরিজ শুরুর আগে থেকেই চাউর হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো বার্তা ছিল না। বৃহস্পতিবার সেটা দিয়ে দিলেন মাশরাফি নিজেই। জানালেন, সকালেই বিষয়টা নিয়ে ভেবেছেন এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিলেন দুপুরে। সতীর্থদের কথাটা মাশরাফি জানিয়েছেন অনুশীলন শুরুর ক্ষণে। সবাইকে ছুঁয়ে গেছে তার বিদায়ের ঘোষণা। দলের অনুশীলন শেষে তারা জানিয়েছেন নিজেদের প্রতিক্রিয়া। সবার কথায় ফুটে উঠেছে দেশের ক্রিকেটে অধিনায়ক মাশরাফির অবদান।
২০১৪ সালে যাকে সরিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে মাশরাফিকে অধিনায়ক করা হয়েছিল, সেই মুশফিকুর রহিম বললেন, ‘মাশরাফি ভাইয়ের বিকল্প কখনও আসবে না। পাশাপাশি এটিও বলব, মাশরাফি ভাই পরিবারের একটি অংশ। শুধু আমাদের জন্য বড় ভাই-ই নন, মাশরাফি ভাই আমাদের একাংশ। অধিনায়ক হিসেবে তাকে অনেক মিস করব।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘উনি অধিনায়ক হওয়ার পর আমাদের দলকে আমূল বদলে দিয়েছেন। মাঠের ভেতরই নয় শুধু, মাঠের বাইরেও অনেক বদলে দিয়েছেন। অবশ্যই অনেক মিস করব। আশা করব, উনি যেন খেলা চালিয়ে যেতে পারেন। উনার নেতৃত্বে খেলা বা উনার সঙ্গে খেলার অন্যরকম মেজাজ আছে। আশা করি বাংলাদেশকে ভবিষ্যতেও অনেক কিছু দিতে পারবেন।
মুশফিকের সুরেই কথা বললেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো তারকা ওপেনার তামিম ইকবাল, ‘এত অল্প সময়ে মাশরাফি ভাইকে নিয়ে কথা বলা কঠিন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য উনি যা করেছেন তা কোনো ক্রিকেটার, ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থক কারও কোনোদিন ভোলা উচিত নয়। আমাদের সবার মনের ভেতর থাকা উচিত। ২০১৫ সালে আমরা একটি জায়গায় ছিলাম, ২০১৯ সালে একটা অবস্থায় এসেছি, উনার হাত ধরেই। ওয়ানডেতে বিশেষ করে গোটা ক্রিকেটবিশ^ আমাদের এখন যেভাবে মূল্যায়ন করে, এটা উনার জন্যই সম্ভব হয়েছে। আমার জন্য, আমাদের জন্য যা করেছেন, কখনই ভোলার নয়। আমার পক্ষ থেকে উনাকে শুভ কামনা জানাই। খেলোয়াড় হিসেবে তাকে এখনও পাব আমরা। আশা করি আরও অনেক দিন তাকে পাব আমরা।’
টাইগারদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বললেন, ‘মাশরাফি ভাই যখন অধিনায়ক ছিলেন, ভাই, বন্ধু বা অধিনায়ক যাই বলেন, আমি পুরো সময়টা খুব উপভোগ করেছি। প্রায় ৬ বছর উনি অধিনায়কত্ব করেছেন। অনেক সাফল্যও পেয়েছেন। উনার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছি এবং এটায় কোনো সন্দেহ নেই যে উনি বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি।’ দলে নিয়মিত মুখ হয়ে ওঠা তরুণ ওপেনার লিটন দাস বলেন, ‘মিস তো করবই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেরা অধিনায়ক তিনি। ক্রিকেটারদের যেভাবে সমর্থন করে গেছেন, এটা বলার মতো নয়। বিশেষ করে জুনিয়র ক্রিকেটারদের। আমার যখন অভিষেক হয়, উনার নেতৃত্বে খেলেছি। আমার জন্য সেটি বড় পাওয়া। আমার পাশে থেকেছেন সবসময়। নতুন যারাই আসে দলে, সবাইকে সমর্থন করেন। অধিনায়ক যখন একজন ক্রিকেটারের এত জোর দিয়ে পাশে থাকে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। উনার ভেতর এই ব্যাপারটি অনেক বেশি আছে। আমরা তাকে অনেক মিস করব।
মাশরাফির নেতৃত্ব খেলার সুযোগ পেয়েছেন, এটাকে মেহেদী হাসান মিরাজ ক্রিকেট জীবনের বড় পাওয়া হিসেবে দেখছেন, ‘অনেকগুলো ওয়ানডে খেলেছি। প্রায় ৪০টির মতো ওয়ানডে খেলা হয়েছে। যে কদিনই ছিলাম, খুবই আগলে রেখেছেন সবাইকে। আমরা বেশিই মিস করব। বিশেষ করে আমরা যারা তাকে অল্প পেয়েছি। তারপরও যতটুকু পেয়েছি, নিজেকে সৌভাগ্যবান বলতে হয়। তার নেতৃত্বে খেলেছি, এটা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল। অনেক সিরিজ জিতেছি তার নেতৃত্বে।’ বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমার ক্ষেত্রে শুধু বলব না, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের জন্যই মাশরাফি ভাইয়ের প্রভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন নতুন, জাতীয় দলে ঢুকেছি, আসলে তখনকার সহায়তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটারের জন্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এদিক থেকে মাশরাফি ভাইয়ের সমর্থন অন্যরকম ছিল। অধিনায়ক বলেন আর ব্যক্তি মানুষ হিসেবে, আমরা তাকে অনেক মিস করব।’
মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন বলেছেন, ‘আমরা সবাই জানি অধিনায়ক হিসেবে তিনি ক্রিকেটারদের কাছে কেমন ছিলেন। বড় ভাই হিসেবে তিনি অসাধারণ। কোনো সমস্যা হলেই আমরা তার কাছে যেতাম। তিনি বুদ্ধি দিয়ে হোক, নিজে চেষ্টা করে হোক, সবসময় যেকোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। অবশ্যই উনাকে অনেক বেশি মিস করব। তারপরও তার সঙ্গে যেখানেই খেলব, অধিনায়ক না থাকলেও সবাই তাকেই নেতা হিসেবে চিন্তা করব।’ ছোট্ট করে মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, ‘ভাইয়ের কোনো ব্যাখ্যা নাই আমার কাছে। আমাকে তিনিই নিয়ে এসেছিলেন দলে। আমার মন এখনও খারাপ।
আরেক পেসার আল আমিন হোসেন বলেছেন, ‘অধিনায়ক হিসেবে তো বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল। তিনি যতদিন খেলেছেন আমাদের আগলে রেখেছেন। কখনও অভ্যন্তরীণ বা বাইরের নেতিবাচক বিষয়গুলো আমাদের বুঝতেই দেননি, তিনি দারুণভাবে সব সামলেছেন। অধিনায়ক হিসেবে তিনি আরও কিছুদিন আমাদের সঙ্গে থাকলে ভালো হতো। অধিনায়ক হিসেবে কালকেই তার শেষ। আমি দোয়া করব, ভাই যেন খেলোয়াড় হিসেবে হলেও আরও কিছুদিন আমাদের সঙ্গে থাকেন।’
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।