বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলে, এক ইনিংসে খারাপ করলে পরের ইনিংসে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। সফলও হয়েছে অনেক সময়। হারলেও লড়াইটা ঠিকঠাক চালিয়ে গেছে ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু ভারত সফরে চলমান টেস্ট সিরিজে সে দৃশ্য যেন অধরাই থেকে গেছে ব্যাটসম্যানদের। রানের খরা যেন কাটছেইনা। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যেখানে সেঞ্চুরি থেকে ডাবল সেঞ্চুরি হাকাচ্ছেন সেখানে মুমিনুল হকদের ব্যাট যেন স্থির হতেই পারছেনা। ইন্দোর টেস্টে ইনিংস ও ১৩০ রানের লজ্জাজনক হারের বৃত্তের প্রভাব পড়েছে এবার গোলাপি বলের ইডেন টেস্টেও।
টপ ও মিডল অর্ডার তিন ব্যাটসম্যানের শূন্যরানে ফেরায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১০৬ রানে। যেখানে ক্রিজে থাকতে পেরেছেন মাত্র ৩০ দশমিক ৩ ওভার। ওই ইনিংসে স্পিন নয়, পুরো ১০ উইকেট উঠেছে পেসারদের ঝুলিতে। জবাব দিতে নেমে ২৪১ রানের লিড নিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা দেয় ভারত। সেই লক্ষ্যে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিক পেসারদের তোপের মুখে ফের বিপর্যস্ত হয় বাংলাদেশ। মাত্র ১৩ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছেন মুশফিকুর রহিম। তার ফিফটিতে দেড়শ ছাড়ানো বাংলাদেশের সংগ্রহ দ্বিতীয় দিন শেষে ৬ উইকেটে ১৫২ রান।
এদিন নিজের ২১তম টেস্ট ফিফটি তুলে নিয়ে মুশফিকুর রহিম ৫৯ রানে ক্রিজে থাকলেও ষষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তাইজুল ইসলাম (১১)। মূলত তার আউটের মধ্য দিয়েই শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের খেলা। ৮৯ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনে আজ মাঠে নামবে বাংলাদেশ। হাতে রয়েছে ৪ উইকেট। মাহমুদুল্লাহ আঘাত প্রাপ্ত হওয়ায় গতকালই মাঠ ছাড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত আজ তার স্থানে কাকে নামানো হবে তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি টাইগার শিবিরে। ফলে ইন্দোর টেস্টের ন্যায় আরেকটি ইনিংস হারের আশঙ্কায় এখন মুমিনুলরা। তাইতো, এদিন প্রধান লক্ষ্য থাকবে ইনিংস হার এড়িয়ে ভারতকে এক বলের জন্য হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠে নামানো। তবে তা কতটা সম্ভব তা মাঠের লড়াই-ই বুঝিয়ে দেবে।
দ্বিতীয় দিনে ৭০ বলে দশ চার হাঁকানো মুশফিক এই ইনিংস খেলার পথে দু’দুবার শিকার হন আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের। তবে নিজের কনফিডেন্স আর বুদ্ধিমত্তায় দুবারই রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মি. ডিপেন্ডেবল। তাই এখন শেষ ভরসা হিসেবে তার দিকেই তাকিয়ে টাইগারভক্তরা। মাত্র ১৩ রানে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দল যখন খাঁদের কিনারে, ইডেনে তখন দ্বিতীয় দিনেই ম্যাচের শেষ দেখছিলেন অনেকে। সেখান থেকে দুই ভায়রা মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর দৃঢ়তায় সে আশঙ্কা থেকে উদ্ধার পায় দল। পরে মুশফিকের ব্যাটে চড়েই তৃতীয় দিনে গড়াতে যাচ্ছে ইডেন টেস্টের খেলা।
এদিন হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন রিয়াদ। ১৯তম ওভারে দ্রুত একটি সিঙ্গেল নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে মাঠ ছাড়তে হয় রিয়াদকে। তার আগে মুশফিকের সঙ্গে গড়েন অতি মূল্যবান ৬৯ রানের জুটি। যা দলকে টেনে তুলতে সাহায্য করে খাঁদের কিনার থেকে। মাঠ ছাড়ার আগে সাত চারে ৩৯ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। এসময় ব্যাট করতে নামেন মিরাজ। মুশফিকের সঙ্গে আরও ৪৯ রান যোগ করে মিরাজ আউট হন ১৫ রান করে। ফলে ১৩৩ রানেই পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
অন্যদিকে, আউট হওয়া চার ব্যাটসম্যান হলেন- সাদমান (০), মুমিনুল (০), মোহাম্মদ মিঠুন (৬) ও ইমরুল কায়েস (৫)। এর মধ্যে তিনজনকেই সাজঘরে ফেরান ইশান্ত শর্মা। এদিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শুরুতেই ত্রাস হয়ে দেখা দেন প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেয়া ইশান্ত। দীর্ঘদেহী এই পেসারদের তোপে প্রথমে শূন্য রানে সাদমানকে এবং পরে দুই রানে মুমিনুলকে হারায় দল। লেগ বিফোর হয়ে ফেরা সাদমান এদিন রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি। তাই শূন্য হাতেই ফিরতে হয় আগের ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৯ রান করা এই ওপেনারকে।
আর প্রথম ইনিংসের মতো এবারো শূন্য রানেই উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অধিনায়ক। অধিনায়কত্বের চাপে যেন পিষ্ট হচ্ছেন লিটল মাস্টার খ্যাত টেস্ট স্পেশালিষ্ট মুমিনুল। দুই টেস্টের এক ইনিংসেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান। যাতে বারবার বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এর আগে শনিবার ব্যাট করতে নেমে প্রথম সেশনে মাত্র একটি উইকেট হারালেও দ্বিতীয় সেশনেই টাইগার পেসারদের তোপের মুখে পড়ে স্বাগতিকরা। প্রায় দুই সেশন খেলে ৯ উইকেট হারিয়ে বোর্ডে ৩৪৭ রান তুলেই ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। এদিন আল-আমিন, এবাদত ও আবু জায়েদের পেস তোপের মুখে ৬ উইকেট হারিয়ে আরও ১৭৩ রান যোগ করতে সমর্থ হয় বিরাট কোহলিরা। যাতে ২৪১ রানের এগিয়ে যায় দলটি।
এদিন শতকের দেখা পেয়েছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এবাদত হোসেনের বলে তাইজুলের দুর্দান্ত ক্যাচ হওয়ার আগে খেলেন ১৩৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। তার ১৯৪ বলের এই ইনিংসে ছিল ১৮টি চারের মার। আর কোহলির আগে আবু জায়েদের বলে বোল্ড হওয়া জাদেজা ফেরেন ১২ রান করে। পরে অশ্বিনকে তুলে নেন ভারত ইনিংসের প্রথম উইকেট শিকারি আল আমিন। ফেরার আগে ৯ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এর আগে শনিবার দুপুরে বড় লিডের লক্ষ্যে দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নামা ভারতীয় শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এরপর উইকেট শিকারে যোগ দেন আবু জায়েদ, এবাদত ও আল আমিন। যাতে ৩৩১ রানেই নবম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। সেঞ্চুরিম্যান কোহলিকে তুলে নিয়ে এদিন উল্লাসে মাতেন পেসার এবাদত হোসেন। রবিচন্দন অশ্বিন ৯ রানে, উমেশ যাদব আর ইশান্ত শর্মা শূন্য রানে আউট হন। তিনটি করে উইকেট নেন আল আমিন ও এবাদত হোসেন। আর আবু জায়েদ নেন দুটি উইকেট।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।