মুমিনুল হক ফেরার পর উইকেটে এসেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এসেছেন—বলতে হচ্ছে কারণ বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অভিজ্ঞ এ ব্যাটসম্যান। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে আউট হয়েছেন বাজে শট খেলে। ১০০ রান তোলার আগেই ৪ উইকেট পড়ায় মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে বড় জুটি গড়ে দলকে বিপদ থেকে রক্ষার দায়িত্ব ছিল মাহমুদউল্লাহর কাঁধে। কিন্তু অযথাই সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। এরপর দ্রুতই মুশফিককে তুলে নেন ভারতের পেসার মোহাম্মদ শামি। তাঁর দুর্দান্ত সুইংয়ের জবাব ছিল না মুশফিকের (১০৫ বলে ৪৩) কাছে।বাংলাদেশের বিপদ আরও ঘনীভূত হয়েছে শামির পরের বলেই। মেহেদী হাসানকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন শামি। ওভারের শেষ বল হওয়ায় হ্যাটট্রিকের সুযোগ সৃষ্টি করেও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে শামিকে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চা–বিরতিতে গিয়েছে দুই দল। তার আগে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১৪০। প্রথম ইনিংসে অন্তত দুই শ রান তোলার আগেই অলআউট হওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ।
এর আগে মোটামুটি ভালোই খেলছিলেন মুমিনুল হক। শেষ অবধি তিনিও ফিরে যান। স্কোরবোর্ডে ১০০ জমা হওয়াআগেই তিনি রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অফ স্টাম্পের ওপরের বলটি পড়তে ভুল করে বসলেন। ৮০ বলে ৩৭ করে বোল্ড তিনি। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৬৮ রানের জুটি গড়ে দারুণ প্রতিরোধ গড়েছিলেন। কিন্তু বড় অসময়ের প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটলেন তিনি। ইন্দোরের হোলকার মাঠে বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক টস জিতে ব্যাটিং নিলেও দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস আর সাদমান ইসলাম কখনোই স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না। উইকেটে পেসারদের জন্য যতটুকু সুবিধা আছে, তার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে শুরু থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন তিন ভারতীয় পেসার উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা ও মোহাম্মদ শামি। ইমরুল–সাদমান ফিরে গেছেন একেবারে শুরুতেই; স্কোরবোর্ডে ১২ রান উঠতেই। মাঝখানে মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে অধিনায়ক মুমিনুলের সামান্য প্রতিরোধ। আপাতত লড়াইটা একাই চালাচ্ছিলেন অধিনায়ক।
৪ উইকেট পড়লেও ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। মুমিনুল এই অশ্বিনের বলেই জীবন পেয়েছিলেন। স্লিপে তাঁর ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন অজিঙ্কা রাহানে। মুশফিক দুই বার জীবন পেয়েছেন। প্রথমবার উমেশ যাদবের বলে অধিনায়ক বিরাট কোহলি স্লিপে ক্যাচ ফেলে দেন তাঁর। দ্বিতীয়বার মোহাম্মদ শামির বলে স্লিপেই রাহানে। এ উইকেট ফাস্ট বোলারদের দিকে শুরুর দিনেই সহায়তার হাত বাড়ায়—বাংলাদেশ অধিনায়ক যখন টস জিতে ব্যাটিং নিলেন তখন মনে মনে খুশিই হয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। খুশির ব্যাপারটা গোপনও করেননি। টসের সময়ই বলে দিয়েছিলেন, তাঁরা টস জিতলে বোলিংই নিতেন। তিন পেসার নিয়ে যে খেলছে ভারত। গতি বোলারদের ওপর কোহলির আস্থা অনেক। টেস্ট শুরুর প্রথম আধ ঘণ্টার মধ্যেই ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবরা সেটির প্রতিদান দিয়েছেন। সুইংয়ে সুইংয়ে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। সেই সুইংয়ের কাছেই পরাভূত এই দুই ওপেনার ইমরুল–সাদমান ও তিনে নামা মিঠুন।
প্রথমে ইমরুল কায়েস যাদবের বলে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন অজিঙ্কা রাহানেকে। স্কোরবোর্ডে রান উঠেছিল তখন ১২। ওই ১২ রানেই ইশান্ত শর্মার বলে উইকেটের পেছনে ঋদ্ধিমান সাহাকে ক্যাচ দিয়েছেন সাদমান। টি–টোয়েন্টি সিরিজের মতো আবারও জোড়া বেধে প্যাভিলিয়নের দিকে ফিরতি মিছিল।দ্রুত ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে লড়ছিলেন মুমিনুল। একটু একটু করে উইকেটে জমে যাওয়ার চেষ্টাও ছিল। রানও আসছিল এক–দুই করে। কিন্তু ১৯ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন এঁরা দুই জন। মোহাম্মদ শামির বলে এলবিডব্লু হয়েছেন মিঠুন। এটিও ওই সুইংয়ের কাছে পরাস্ত হয়েই। শামির মিডল স্টাম্পের ওপর পড়া বলটি পা সামনে নিয়ে রক্ষণাত্মক খেলতে চেয়েছিলেন মিঠুন। কিন্তু বলটি সুইং করে তাঁর প্যাডে লাগলে আম্পায়ারের খুব একটা বেগ পেতে হয়নি সিদ্ধান্তটি দিতে। মুশফিকের ৩৪ রান এসেছে ৬৫ বলে। ৪টি চার মেরেছেন তিনি। তবে অশ্বিনের বলে লং অনের ওপর দিয়ে মারা বিশাল ছক্কাটির কথা আলাদাভাবেই বলতে হয়। মুমিনুলের সঙ্গে তাঁর জুটিটি কোহলির কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। মুমিনুলের বিদায়ের পর এ মুহূর্তে তাঁর সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ।এখনো পর্যন্ত চার বোলার ব্যবহার করেছে ভারত—ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামি ও অশ্বিন। প্রত্যেকেই নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।