প্রকাশ: ৪ নভেম্বর ২০১৯, ২১:৩৭
মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছার কথা বলে গিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার সাবেক সফল মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। বাবার শেষ ইচ্ছার কথা জানাতে ছেলে প্রকৌশলী ইশরাকে হোসেন জানাতে রোববার সকালে ফোন করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক দোয়া অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব খোকার শেষ ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন। মুক্তিযোদ্ধা খোকার সেই ইচ্ছাটা পূরণ হওয়ার আগেই তিনি বিদায় নিলেন।
এদিকে হাসপাতালে যাওয়ার আগে সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে আক্ষেপ করে বলেছেন, জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশের মাটিতে বিদায় হবে কিনা আল্লাহ জানেন। আমার জন্য দোয়া করো।
এদিকে সাদেক হোসেন খোকার অবস্থা সংকটাপন্ন শুনে ভেঙে পড়েছেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তার সুস্থতা কামনায় একটি আবেগঘন খোলা চিঠি লিখেছেন। সেটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে দিয়েছেন মির্জা আব্বাস। এই চিঠি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে বিএনপির নিযুত নেতাকর্মীদের। খোলা চিঠিতে মির্জা আব্বাস লিখেছেন, সুস্থ হয়ে ফিরে এসো খোকা, ফিরো এসো। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।
মির্জা আব্বাস লিখেছেন, ‘প্রিয় খোকা, এই মাত্র আমি খবর পেলাম যে, তোমার শরীর খুব খারাপ। তুমি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। জানার পর থেকে আমার মানসিক অবস্থা যে কতটা খারাপ, এই কথাটুকু কারও সঙ্গে শেয়ার করব, সেই মানুষটা পর্যন্ত আমার নেই। তুমি-আমি একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, অনেক স্মৃতি আমার চোখের সামনে এই মুহূর্তে ভাসছে।’
স্বার্থান্বেষীরা তাদের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে রেখেছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস লিখেছেন, ‘তোমার আর আমার দীর্ঘ এই পথচলায় কেউ কেউ তাদের ব্যক্তি স্বার্থে তোমার আর আমার মাঝে একটা দূরত্ব তৈরি করে রেখেছিল। তবে তুমি আর আমি কেউই সেই দূরত্বে রয়েছি বলে আমি কখনোই মনে করিনি।’
খোকার দুঃসময়ে পাশে না থাকতে পারার আক্ষেপ প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস লিখেছেন, ‘আমি জানি না, তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে কিনা? আমার এ লেখাটি তোমার চোখে পড়বে কিনা বা তুমি দেখবে কিনা, তাও আমি জানি না। তবে বিশ্বাস কর, তোমার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানর পর থেকেই বুকের ভেতরটা কেন যেন ভেঙে আসছে।’
খোকার সুস্থতার কামনা করে আব্বাস লিখেছেন, ‘আমি বারবার অশ্রুসিক্ত হচ্ছি। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে দুহাত তুলে তোমার জন্য এই বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করছি- তিনি অবশ্যই তোমাকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরে আনবেন।’
আবার একসঙ্গে পথচলার আশাবাদ ব্যক্ত করে আব্বাস লিখেছেন, ‘তুমি আর আমি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, বুকে বুক মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে কাজ করে যাব। না হয় সেই আগের মতোই স্বার্থপর কোনো মানুষদের জন্য আব্বাস আর খোকা বাইরে বাইরে দূরত্বের সেই অভিনয়টা করে যাবে, আর ভেতরে থাকবে দুজনের প্রতি দুজনের অন্তর নিংড়ানো ভালোবাসা।’ ‘আল্লাহ তোমার সুস্থতা দান করুক। তুমি ফিরে এসো খোকা, তুমি ফিরে এসো। আমি অপেক্ষায় থাকব’-যোগ করেন আব্বাস।
খোকার জীবনের শেষ ইচ্ছানুযায়ী অন্তিম সময়ে তাকে দেশে নেয়াও পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। পাসপোর্ট না থাকায় দেশে ফিরতে পারেননি তিনি। পরবর্তী সময়ে কী হবে, এ নিয়ে স্বজনরা বিভ্রান্তিতে আছেন। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সপরিবারে নিউইয়র্ক চলে যান সাদেক হোসেন খোকা। তার পর থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে একটি বাসায় দীর্ঘদিন ধরে থাকছিলেন বিএনপির এ নেতা।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব