ছাত্রলীগের দুই পদেই আসছে ভারপ্রাপ্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১২ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:১১ পূর্বাহ্ন
ছাত্রলীগের দুই পদেই আসছে ভারপ্রাপ্ত

শোভন-রাব্বানীর দুনিয়া ছোট হয়ে আসছে! ঘরে-বাইরে চাপের মুখে থাকা ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের জন্য এবার বন্ধ হলো গণভবনের দরজা। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে থাকায় পাশে পাচ্ছেন না কাউকে। আলোচনা চলছে দুই পদে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে কিছুদিন সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা। পরবর্তীতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। সময়ের আলো নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করার জন্য যখন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কাছে ঘুরছেন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা তখনই দুঃসংবাদ পেল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের দেখা করার অনুমতি স্থগিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ক্ষোভ কমার সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ। তারা আর গণভবনে প্রবেশ বা প্রধানমন্ত্রীর সামনে আসতে পারছেন না।

আগামী শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সে বৈঠকে ছাত্রলীগের বিষয়েও আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত যেহেতু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে হয়েছে তাই এখন থেকে ছাত্রলীগের অন্যান্য সিদ্ধান্তও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে আসতে পারে। এ ছাড়া এ বৈঠক থেকে আগামী অক্টোবর বা নভেম্বরে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখও চূড়ান্ত হতে পারে। আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, শোভন-রাব্বানীর কিছু কর্মকান্ডে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হলেও পুরো ৩০০ সদস্যের কমিটির সবার ওপর তিনি ক্ষুব্ধ নন। শোভন-রাব্বানীর দায় পুরো ছাত্রলীগের ওপর তিনি দিতে চান না। এ জন্য দক্ষ ও সাংগঠনিক দেখে দুজনকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। যারা আগামী সম্মেলন পর্যন্ত রুটিন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবে। এ রকম কিছু হলে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগেই ছাত্রলীগের বিশেষ সম্মেলন হতে পারে।

শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকের ওপর নিজের ক্ষোভের কথা জানান। তাদের বেশ কিছু অপকর্মের কথা দলীয় নেতাদের সামনে তুলে ধরেন। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রী তাদের গণভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন। সেদিন ছাত্রলীগের দুই নেতাও গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেই তারা গণভবন ত্যাগ করেন। পরদিন রোববার সন্ধ্যা ও সোমবার সকালেও তারা গণভবনে যান। পরে গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে গণভবনে তাদের নিষেধাজ্ঞা।

পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, ঢাকা মহানগর ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাসহ নির্দিষ্ট একটি তালিকা রয়েছে যারা প্রধানমন্ত্রী গণভবনে থাকলে যেকোনো সময় গণভবনে প্রবেশ করতে পারেন। সেখান থেকে শোভন-রাব্বানীর নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পরবর্তী নির্দেশ না দিলে তারা গণভবনে প্রবেশ করতে পারবে না। এ নিষেধাজ্ঞার খবর গণভবনের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।  এদিকে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে পরিবর্তন আনার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নিজের। ছাত্রলীগের কমিটির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসছে কি না, জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রী সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচাই-বাছাই করে ছাত্রলীগের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি নির্বাচন করেছেন। আমি নেত্রীর পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়েছি। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, ইউনিভার্সিটি ও সিটি উত্তর-দক্ষিণ একসঙ্গে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিদের নাম ঘোষিত হয়েছিল। এটা নেত্রী নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন যদি ছাত্রলীগের এই কমিটির ব্যাপারে নতুন কোনো বিবেচনা আসে, সংযোজন বা পরিবর্তনের কোনো প্রশ্ন আসে, আমি মনে করি নেত্রী নিজেই করতে পারেন। যেহেতু কমিটিটা তিনিই করেছেন, কাজেই কমিটির ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন বা সংশোধন-সংযোজনের প্রয়োজন হয় সেটা নেত্রী নিজেই করবেন এবং নেত্রী নিজে করাটাই সঙ্গত।’ ছাত্রলীগের আগাম সম্মেলনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোনো ইঙ্গিত পাইনি, পেলে জানাব।’ মঙ্গলবার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনিয়মের বিষয়গুলো আপনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা আমাদের পার্টির একদম ভেতরের ব্যাপার। ছাত্রলীগের বিষয়টি নেত্রী সরাসরি নিজেই দেখছেন। বিষয়টি এখন যে পর্যায়ে আছে, সিদ্ধান্ত আকারে কোনো কিছু যদি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় না যায়, এর আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’

ছাত্রলীগের বর্তমান কর্মকান্ডে আপনারা সন্তুষ্ট নাকি অসন্তুষ্ট এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই মন্তব্য এখন করব না। আমি সব সময় ভালো কাজের প্রশংসা করি, দলের ভেতরেও খারাপ কাজ হলে ডিসিপ্লিন ভঙ্গ হলে সে জন্য যদি কাউকে তিরস্কার করতে হয়, আমি সেটার পক্ষে। ভালো কাজের পুরস্কার দেওয়া উচিত। এটা আমরা আওয়ামী লীগে করে থাকি।’