ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের বাসা থেকে ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ব্যাংক চেক, ১ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ও ২ লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করেছে র্যাব। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডে মিজানের বাসায় অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
তিনি জানান, ক্যাসিনোবিরোধী চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে র্যাব-৯ এর একটি দল শুক্রবার সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অভিযান চালিয়ে ডিএনসিসির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানকে গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় র্যাব মিজানের কাছ থেকে চার রাউন্ড গুলিসহ একটি অবৈধ অস্ত্র এবং বৃহস্পতিবার ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ টাকা উত্তোলনের প্রমাণ থাকা কাগজও উদ্ধার করেছে বলেও জানান ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
তিনি বলেন, "মিজানকে শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকায় এনে বিকালে প্রথমে তার মোহাম্মদপুরের অফিসে অভিযান চালানো হয়। তবে সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তার বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে বিশাল অংকের টাকার চেক ও এফডিআর উদ্ধার করা হয়।" কাউন্সিলর মিজানের কাছ থেকে ব্যাংক চেক ও এফডিআরের নথি উদ্ধার করা গেলেও বৃহস্পতিবার ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা টাকা সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি র্যাবকে দেননি। তবে, দেশ থেকে পালানোর উদ্দেশেই তিনি এই টাকা তুলেছিলেন বলে ধারণা করছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
আয়ের উৎস নেই, তবে টেক্সাসে বাড়ি আছে মিজানেরঃ র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, এই বিপুল অংকের টাকার কোনো উৎস দেখাতে পারেননি মিজান। র্যাবকে মিজান জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা বাদের আয়ের তেমন উৎস নেই তার। এছাড়া ভাড়া দেওয়া তিনটি বাড়ি থেকে ৯০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। তবে, টাকার উৎস না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বাড়ি রয়েছে তার। সেখানে তার বিলাসবহুল কয়েকটি গাড়িও রয়েছে। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, "এই আয় দিয়ে কখনই এতো বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি কেনা সম্ভব নয়"।
১৯৮৯ সালে ধানমন্ডিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত ছিলেন কাউন্সিলর মিজানঃ আওয়ামী লীগে যোগদানের পূর্বে ফ্রিডম পার্টির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন কাউন্সিলর মিজান ও তার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান। ১৯৮৯ সালে ধানমন্ডিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম।
সূত্র জানায়, কয়েক দশক আগে এক মামলায় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেন মিজান। পরে গ্রেফতার এড়াতে বিবস্ত্র অবস্থায় পুকুর থেকে উঠে আসেন তিনি। সেই থেকে তিনি 'পাগলা মিজান' নামে পরিচিতি পান। পরে ধীরে ধীরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় তিনি গড়ে তোলেন মাদক ও ত্রাসের রাজত্ব। হত্যা, লুটপাটসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুক্রবার মিজানের বাসায় অভিযান চালানোর সময়ও স্থানীয়রা তার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিয়েছেন।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।