আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৯) সাইডলাইন গোলটেবিল বৈঠকে বিশ্বব্যাপী কৃষকদের জন্য ঋণ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, "যতদিন পর্যন্ত কৃষকদের ঋণ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা না হবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।"
বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ড যৌথভাবে আয়োজিত ‘আ গ্লোবাল কনভারসেশন: অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স ফর স্মল স্কেল ফার্মার্স’ শিরোনামের এই সেশনটি কৃষকদের জন্য অর্থায়নের প্রভাব এবং তাদের জন্য ঋণ সুবিধার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে। অনুষ্ঠানে নেদারল্যান্ডসের জলবায়ু দূত ডাচ যুবরাজ জেইমি বার্নার্ডোও উপস্থিত ছিলেন।
ডাচ যুবরাজ তার বক্তৃতায় বলেন, "বিশ্বজুড়ে কৃষকদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নয়নে ঋণ, বিমা, বিনিয়োগ এবং গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখন সময় এসেছে কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার।" তিনি আরও যোগ করেন, "বিনিয়োগ এবং ঋণ সুবিধা না থাকলে কৃষকরা তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না।"
এছাড়া, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইভন পিন্টো বলেন, "কৃষকরা ঋণ পাওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "যদি কৃষকরা সঠিকভাবে ঋণ পায়, তবে তারা শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, বরং বাজারে গিয়ে বিক্রি করে তাদের জীবনমান উন্নয়ন করতে পারবে।"
বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ইউনূস এই সেশনেও তার বক্তব্যে বলেন, "কৃষকরা শুধু ফসল ফলান না, তারা সেই ফসল বাজারে বিক্রিও করেন। তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ দিলে তারা অন্য কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনে, সেগুলো বাজারে বিক্রি করে আরও উন্নতি করতে পারে।"
ড. ইউনূস আরও বলেন, "বিশ্বব্যাপী কৃষকদের জন্য অর্থায়ন এবং ঋণের সহজ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হলে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল অনুসরণ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।" তিনি দেশের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানান যে, "প্রতিটি দেশে একটি সামাজিক ব্যবসা ব্যাংকিং আইন থাকা উচিত, যা ক্ষুদ্র কৃষক ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবে।"
অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তৃতায় আরও বলেন, "বর্তমানে সারা বিশ্বে অন্তত ১১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক ব্যবসা কোর্স হিসেবে পড়ানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক একটি পরিবর্তন।"
এ বৈঠকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং নীতি নির্ধারকরা একযোগে কৃষকদের জন্য উপযুক্ত ঋণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করেও তাদের জীবিকা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।