প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২১, ২৩:২৬
আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। এবার ঘর থেকেই বের হতে পারবে না সাধারণ মানুষ। এমন খবরে আবারো আজ বুধবার রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেন লাখো মানুষ। কোনো নিষেধাজ্ঞা বা স্বাস্থ্যবিধিই মানছেন না তারা। যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন গ্রামের বাড়িতে।
কিন্তু ঢাকার চারপাশের জেলাগুলোতে আগে থেকে লকডাউন চলায় তীব্র ভোগান্তিতে পড়ছেন ঘরমুখী মানুষ। ২-৩ ধরে সকাল থেকেই রাজধানী থেকে ছেড়ে আসা ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
বিআইডব্লিউটিসি বলছে, এটা তাদের দায়িত্ব নয়। আর পুলিশ বলছে, মানুষে ঢল সামলানো যাচ্ছে না।
এদিকে লকডাউনের ঘোষণায় মহাসড়কে বেড়ে যায় সাধার মানুষের চলাচল ও যানবাহন।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৩ জুন থেকে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দূরপাল্লার যান বন্ধ করে দেওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখী মানুষকে। সরেজমিনে দেখা যায়, ঘরমুখো এসব মানুষ রিকশা, অটোরিকশায়,সিএনজি সহ বিভিন্ন উপায়ে পাটুরিয়া ঘাটে এসে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছাচ্ছেন।
এরপর ঘাট থেকে মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, থ্রি হুইলার, রিক্সা, ব্যাটারী চালিত অটোতে তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
মো. তৌহিদুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে পর্যন্ত আসতে ৫ বার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। অটোরিকশা ও সিএনজি পুলিশ আটকে দিয়েছে। তাই ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে। অনেক পথ ঘুরে গ্রামের রাস্তা দিয়ে আসতে হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার দৌলতদিয়া বাস টার্মিলনাল গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাস চলাচল না করায় পরিবারসহ শতশত মানুষ ব্যাগ ও অন্যান্য দরকারি জিনিস নিয়ে ফেরি থেকে নেমে তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন।
কঠোর লকডাউন শুরুর আগের দিন যাত্রীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে কিংবা ফেরি ও যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে-এই আশঙ্কায় বুধবার ঢাকা ছাড়ছেন বলে জানান। এছাড়া লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ায় আশঙ্কাও করছেন তারা।
স্ত্রী-সন্তানকে গোপালগন্জে গ্রামের বাড়ি পাঠাতে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত আসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলাল হোসেন। তিনি বলেন, প্রাইভেটকার ভাড়া করে স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। লকডাউন এক থেকে দুই মাস থাকতে পারে। এছাড়া আজকেই সুযোগ, কাল থেকে কঠোর লকডাউন সকল প্রকার গাড়ি বন্ধ থাকবে।
বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন প্রবেশমুখে ছিল বিভিন্ন যানবাহন ও মানুষের ভিড়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, থ্রি হুইলার, মাইক্রোবাসে লোকজনের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল বলে লক্ষ্য করা যায়।
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার প্রবেশমুখ দেখা যায়, যাত্রীরা হেঁটে টার্মিনালে যাচ্ছেন। এ সময় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, কঠোর লকডাউনে বাড়ি থেকে নাকি বের হওয়া যাবে না। কাজ বন্ধ থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। তাই আগেভাগেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন তারা।
কিন্তু ফেরিতে কেউ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। আর অনেকের মাস্ক নেই। আবার যারা মাস্ক পরেছেন, তাদের অনেকের থুতনিতে ঝুলছিল।
ঢাকার গাজীপুরে রড মিস্ত্রির কাজ করেন কামাল খান। তিনি গ্রামের বাড়ি মধুখালি যেতে নদী পার হয়ে আসেন ফেরিঘাটে। তিনি জানান, লকডাউনে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ঢাকায় বেকার বসে টাকা নষ্ট করার কোনো অর্থ হয় না। তাই গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
এদিকে ফেরিতে শুধুমাত্র পণ্যবাহী ও জরুরি যানবাহন পারাপারের কথা থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়িও পারাপার হতে দেখা যায়। ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে মানুষের বের হওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানা হচ্ছে না। যদিও বিভিন্ন স্থানে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের মহাব্যবস্থাপক মো. ফিরোজ শেখ বলেন, এ নৌরুটে বর্তমানে ১৫টি ফেরি সচল রয়েছে। সকাল থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে থেমে থেমে যাত্রীদের মোটামুটি ভিড় ছিল। তবে গাড়ির চাপ নেই।
তিনি বলেন, লকডাউনের আওতামুক্ত গাড়ি পারাপারের কথা থাকলেও বিভিন্ন উপায়ে যাত্রীরা ঘাটে আসছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যাত্রী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাদের নয়। মানুষ জোর করে ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। তাদের আটকানো যাচ্ছে না। পথে আটকানো না হলে তাদের ঘাট এলাকায় আটকানো সম্ভব নয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে কয়েকটি পয়েন্টে ও দৌলতদিয়া ঘাটের প্রবেশমুখে রয়েছে পুলিশের একাধিক চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে পুলিশ যাত্রী চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে দাবি করেন তারা।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, লকডাউনের নির্দেশনা মানার জন্য মানুষকে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
কিন্তু যাত্রীরা বিভিন্নভাবে ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপায়ে ঘাটে আসছে। আবার দৌলতদিয়া ঘাট থেকে আসা যাত্রীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চালে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদেরকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।