প্রকাশ: ৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:৭
ঢাকায় বসবাসরত শতভাগ শিশুর রক্তে বিষাক্ত ভারী ধাতু সিসা পাওয়া গেছে, যার মধ্যে ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে রয়েছে উদ্বেগজনক মাত্রার বেশি সিসা। এমনই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে আইসিডিডিআর,বি পরিচালিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায়। বুধবার মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি মিলনায়তনে 'বাংলাদেশে সিসা দূষণ প্রতিরোধ : অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক আলোচনায় গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষায় প্রত্যেকটির দেহে সিসা পাওয়া গেছে। এসব শিশুর গড় রক্তে সিসার পরিমাণ ৬৭ মাইক্রোগ্রাম/লিটার, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে লাখো শিশু মানসিক ও শারীরিকভাবে স্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লেড-অ্যাসিড ব্যাটারি কারখানা, সিসা গলানোর কেন্দ্র, রঙ, প্রসাধনী ও রান্নার পাত্র থেকেই শিশুদের দেহে সিসা প্রবেশ করছে। এমনকি কারখানার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা অন্যদের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি।
সভায় জানানো হয়, সিসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত করে, শেখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং পুষ্টির ঘাটতির ঝুঁকি তৈরি করে। এসব শিশু পরবর্তী জীবনে বুদ্ধিমত্তা ও কর্মক্ষমতায় পিছিয়ে পড়বে, যা জাতীয় উন্নয়নের জন্য হুমকি।
সিসা দূষণের উৎস চিহ্নিত করে বন্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক স্টিভ লুবি। তিনি বলেন, বাতাস, খাদ্য, ধূলিকণা এমনকি গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা থেকেও সিসা শিশুর শরীরে ঢুকছে।
আশার বিষয় হলো, আগে রান্নার হলুদের গুঁড়ায় সিসার উপস্থিতি থাকলেও, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। যা আইন প্রয়োগ ও জনসচেতনতার মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।
সভায় আইসিডিডিআর,বির নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ও জাতির ভবিষ্যৎ রক্ষায় সিসা দূষণের বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
এই গবেষণা ও বার্তা নীতিনির্ধারকদের দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি নিরাপদ ও সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে।