সংবিধান সংস্কারে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ, জানুয়ারিতে প্রস্তাব জমা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশেষ প্রতিবেদক - আইন আদালত
প্রকাশিত: শনিবার ৪ঠা জানুয়ারী ২০২৫ ০৪:৫৫ অপরাহ্ন
সংবিধান সংস্কারে বড় ধরনের পরিবর্তনের সুপারিশ, জানুয়ারিতে প্রস্তাব জমা

ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সংবিধান সংস্কার কমিশন দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনা দিচ্ছে। জানুয়ারির মাঝামাঝি কমিশনের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধান পর্যালোচনা ও ১২০টি দেশের সংবিধান বিশ্লেষণ করে এই প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে।  


প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারা, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী এক ব্যক্তি না হওয়া, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা প্রবর্তন, ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের বিধান, স্পিকারের একক ক্ষমতা সীমিত করা এবং সংসদ সদস্য হওয়ার বয়সসীমা ২১ বছর নির্ধারণ।  


ড. আলী রীয়াজ বলেন, "এই প্রস্তাবনার লক্ষ্য গণতান্ত্রিক কাঠামোকে জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর করা। বিভিন্ন পক্ষের মতামত ও অভিজ্ঞতা সমন্বিত করে আমরা এসব সুপারিশ করেছি। ১৯৭২ সালের সংবিধান যে ১৭টি সংশোধনের মধ্য দিয়ে গেছে, সেগুলোর পর্যালোচনা করে কার্যকর সমাধান খোঁজা হয়েছে।"  


তিনি আরও বলেন, "দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভিন্নমতের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ তৈরি হবে। এ ধরনের কাঠামো গণতান্ত্রিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী পদের জবাবদিহি নিশ্চিত করাও জরুরি।"  


কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, নির্বাচনের বয়সসীমা ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর নির্ধারণ করলে তরুণদের নেতৃত্বে আসার সুযোগ তৈরি হবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।  


এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ আহসানুল করিম বলেন, "এসব সুপারিশ ইতিবাচক হলেও বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য ছাড়া এই সংস্কার কার্যকর করা কঠিন হবে।" তিনি আরও বলেন, "সংস্কারের মাধ্যমে এমন কাঠামো তৈরি করতে হবে, যা পরবর্তী সরকারগুলোকেও দায়বদ্ধ রাখবে।"  


১৯৭২ সালের সংবিধান প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ১৭ বার পরিবর্তিত হয়েছে। একদলীয় ব্যবস্থা বৈধতা দেওয়া থেকে শুরু করে সামরিক শাসন জারি, সবকিছুতেই সংবিধান ব্যবহার হয়েছে। এসব ভুলত্রুটি সংশোধনের লক্ষ্যেই কমিশন বিভিন্ন অংশীজনের মতামত এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করেছে।  


সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়িত হলে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও সুসংহত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। তবে এই পরিবর্তনগুলো কার্যকর করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্যের প্রয়োজন। সংশোধনগুলো বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর জবাবদিহি এবং মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে এটি মাইলফলক হতে পারে।