বাংলাদেশে হোন্ডা ’ওয়াই-ই-এস’ অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম ২০২০ অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
সামির আসাফ, প্রতিনিধি ( ঢাকা )
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারী ২০২০ ০৪:৫১ অপরাহ্ন
বাংলাদেশে হোন্ডা ’ওয়াই-ই-এস’ অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম ২০২০ অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড (বিএইচএল) ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (জেআইসিই) এর সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হোন্ডা ফাউন্ডেশন গত ৪ আগস্ট, ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে প্রথম হোন্ডা ইয়াং ইঞ্জিনিয়ার ও সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম চালু করে। আজ ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদেরকে প্রদান করা হয়। 

অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হোন্ডা ফাউন্ডেশন এর প্রেসিডেন্ট জনাব হিরোতো ইশিদা, বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জনাব হিমিহিকো কাটসুকি, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রোফেসর ডক্টর জামিলুর রেজা চৌধুরি,  চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, হোন্ডা ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সচিব জনাব কেনটো মাতসুমোতো, একমাত্রা সোসাইটি এর জনাব হিরোকি ওয়াতানাবে, বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড এর ফিন্যান্স ও কমার্শিয়াল হেড জনাব শাহ মাহমুদ আশেকুর রহমান, বিজয়ীরা, গণমাধ্যমের গণমান্য ব্যক্তি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। 

এই অ্যাওয়ার্ডের উদ্দেশ্য হলো এশিয়ার দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য সেসব দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অঙ্গনের প্রতিভাবানদের উৎসাহিত করা। “ওয়াই-ই-এস” অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে প্রতিভাবানদের অনুসন্ধান ও উৎসাহিত করা হয়, ফলে তারা যেন ভবিষ্যতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে পারে। যা মানবসভ্যতার উন্নয়নে এবং মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে সঙ্গতি বিধানে সহায়তা করবে। অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামটি সর্বপ্রথম চালু করা হয় ভিয়েতনামে ২০০৬ সালে এবং বর্তমানে এশিয়ার অন্যান্য দেশ: ভারত, কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারে এ প্রোগ্রামটি চালু রয়েছে। এ দেশগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে দ্রুত উন্নতি করছে। প্রোগ্রামটি প্রতিটি দেশে ভিন্নভাবে চালু রয়েছে। ৬ষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এই অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। 

অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়:

বাংলাদেশে মোট চারটি পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি এর সাথে হোন্ডা ফাউন্ডেশন তাদের “ওয়াই-ই-এস” অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম শুরু করে:

১. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)
২. চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)
৩. খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)
৪. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)

অ্যাওয়ার্ড:

প্রত্যেক বিজয়ীরা হোন্ডা ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড এর পক্ষ থেকে পাবে ৩০০০ মার্কিন ডলার ও একটি মোটরসাইকেল। 

এই প্রোগ্রামের আওতায় প্রতি বছর উল্লেখিত চার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারজন স্নাতক পাঠরত শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হবে এবং প্রত্যেককে ৩০০০ মার্কিন ডলার দেওয়া হবে। এছাড়াও, এই প্রোগ্রামের আওতায় বিজয়ীরা আরও ১০০০০ মার্কিন ডলার পাবে, যদি তারা অ্যাওয়ার্ডটি পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে জাপানের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর অথবা ডক্টরেট করে অথবা হোন্ডা ফাউন্ডেশনের অনুমোদিত জাপানী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা জাপানে কোনো প্রাইভেট কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ নেয়। এই অ্যাওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানটি ২০২০ সালে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। স্বাধীনভাবে চলার আনন্দ উপভোগ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড প্রত্যেককে একটি করে মোটরসাইকেলও দিবে। 

ফলাফল: হোন্ডা ফাউন্ডেশন এর সভাপতি হিরোতো ইশিদা বাংলাদেশের প্রথম “ওয়াই-ই-এস” অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন:

ক্রমিক

বিজয়ীর নাম

বিশ্ববিদ্যালয় 

বিভাগ

তনুশ্রী দত্ত

বুয়েট

ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং 

তাহসিনা আলম

বুয়েট

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

শাশ্বত সৌম্য

বুয়েট

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং

সত্যকি বণিক

বুয়েট

ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং

তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, যারা বিজয়ী হয়েছে তারা এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিবে।”

মূল্যায়ন পদ্ধতি:

১. শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বরাবর একটি নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে হবে।   

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারিশপত্র যা জাপান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (জেআইসিই) কে দেওয়া হবে।

৩. জেআইসিই তা যাচাই করে ১৫জন শিক্ষার্থীদের বাছাই করবে এবং তাদের চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য অন্যান্য বিচারকদের কাছে পাঠানো হবে। 

চূড়ান্ত মূল্যায়ন:

জেআইসিই ১৫জন শিক্ষার্থী বাছাই করে বিজ্ঞ বিচারক প্যানেলে পাঠাবে চূড়ান্তভাবে ৪ জন বিজয়ী নির্বাচন করার জন্য। মূল্যায়নের জন্য দু’টি পরীক্ষা নেওয়া হবে:

১. রচনা লেখা (প্রথম দিন): পরীক্ষার্থীদের পেশাগত ও সামাজিক জ্ঞান যাচাই করা হবে। 

২. সাক্ষাৎকার (দ্বিতীয় দিন): অন্যান্য দক্ষতার (উপস্থাপন, যোগাযোগ, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি) সাথে পেশাগত ও সামাজিক জ্ঞান যাচাই করা হবে। 
বিজ্ঞ বিচারক প্যানেল:

মূল্যায়ন ও যাচাইয়ের জন্য আমরা ৬ জন বিজ্ঞ বিচারকদের নির্বাচন করেছি। তারা হলেন:

ক্রমিক নং

বিচারকের নাম

বিচারক

পেশা

কর্মক্ষেত্র

ডক্টর জামিলুর রেজা চৌধুরি

প্রধান বিচারক

ইঞ্জিনিয়ার

ভাইস চ্যান্সেলর, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়

জনাব আবুল হায়াত

বিচারক

ইঞ্জিনিয়ার ও অভিনেতা

অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী ও অভিনেতা

ডক্টর তাতেও আরিমোতো

বিচারক

টিবিএ

পরিচালক, হোন্ডা ফাউন্ডেশন

জনাব হিতোশি হিরাতা

বিচারক

সেবা

জেনারেল ম্যানেজার, জাইকা

জনাব হিরোকি ওয়াতানবে

বিচারক

এনজিও

একমাত্রা সোসাইটি

জনাব শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান 

বিচারক

চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট

হেড অব ফিন্যান্স, বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড

আমরা আশা করি এ প্রোগ্রাম তরুণ প্রজন্মকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে এবং জাপানী তরুণদের সাথে তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন ও মেলবন্ধন তৈরি করবে, যাতে তারা নিজ নিজ দেশে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও শিল্পক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে। আমাদের লক্ষ্য, এই প্রোগ্রামের ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে মানবকল্যাণ করা এবং সত্যিকার মানবসভ্যতা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সবাই প্রযুক্তির সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে পারে। 

সংশ্লিষ্ট কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত তথ্য:

হোন্ডা মোটরস কোম্পানি লিমিটেড: সকলের জীবন-যাপন প্রকিয়াকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তুলতে তাদের চলাচলের স্বাধীনতা তৈরি করে দেওয়ার মাধ্যমে নিত্যদিনের জীবনের সম্ভাবনাগুলোকে বিকশিত করতে সারাবিশ্বে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি শুধু আমাদের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে সাফল্য আসে না, বরং পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুললেই সাফল্য দেখা যায়। হোন্ডা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা পরিবর্তনের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে এবং হোন্ডা ফাউন্ডেশন সে লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে যাচ্ছে। 

হোন্ডা ফাউন্ডেশন: ১৯৭৭ সালে হোন্ডা মোটর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা সইচিরো হোন্ডা ও তার ছোট ভাই বেনজিরো’র অর্থসাহায্যে প্রতিষ্ঠা করেন। সোচিরো হোন্ডা মনে করতেন, মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকাটা বেশি জরুরি আর প্রযুক্তির কাজ শুধু মানুষের সেবা করা। ফাউন্ডেশনটির লক্ষ্য সত্যিকারের মানবসভ্যতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া। আর তা শুধুই সম্ভব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে। তাই বাস্তবায়ন করতে ফাউন্ডেশনটি নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নিয়েছে:

হোন্ডা পুরষ্কার: এটি একটি বার্ষিক পুরষ্কার যা কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে দেওয়া হয়, যিনি বা যারা মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি করতে (ইকোটেকনোলজি বা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন। 

আন্তর্জাতিক সভা ও সম্মেলন: বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ভূমিকা ও সম্ভাবনা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। 

হোন্ডা “ওয়াই-ই-এস” অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম: এটি একটি বৃত্তিমূলক কর্মসূচি যেখানে সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধান করে উৎসাহ দেওয়া হয় যাতে তারা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বাস্তব রূপ দিতে পারে। 

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড: সেরা মানের পণ্য সাধ্যের মধ্যে বাজারজাতকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সকলকে চলাচলের স্বাধীনতা তৈরি করে দেওয়ার মাধ্যমে সমাজে অবদান রেখে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেড নিজেদেরকে সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্যে স্থির থাকতে যে কোনো চ্যালেঞ্জ তারা গ্রহণ করবে। 

জাপান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার (জেআইসিই): জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাইকার সম্মিলিত কর্মসূচি এটি। এর মাধ্যমে ওডিএ প্রোজেক্টে প্রাইভেট সেক্টরের ভূমিকা ও কার্যক্রম শক্তিশালী করা মূল উদ্দেশ্য। হোন্ডা “ওয়াই-ই-এস” অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম এর লিয়াজো হিসেবে জেআইসিই কাজ করছে। 

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব