বিএম কলেজ এবং ৫নং ওয়ার্ড নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাদের মাঠে নামতে বলেন - লুনা আব্দুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বুধবার ৩০শে অক্টোবর ২০২৪ ০৭:০৬ অপরাহ্ন
বিএম কলেজ এবং ৫নং ওয়ার্ড নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাদের মাঠে নামতে বলেন - লুনা আব্দুল্লাহ

বরিশালের সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্টে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। সোমবার, লুনা দুটি ফেসবুক পোস্টে বরিশালের বিএম কলেজ এবং নগরীর ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করেন। এই পোস্টে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রাজপথে নামারও আহ্বান জানান। 


লুনার এই পোস্টের ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ এবং হতাশা দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি ছাত্রলীগ কর্মীদের বিপদে ফেলার একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লুনার এই কার্যক্রম সেরনিয়াবাত পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও উসকে দিয়েছে, যা সরকারের পতনের পর থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।


কিছুদিন আগে বরিশাল সিটি নির্বাচনে খোকন সেরনিয়াবাত নৌকার মনোনয়ন লাভ করেন, যদিও তিনি আওয়ামী লীগের কোনও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এই মনোনয়ন তাকে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছোট ভাই হিসেবে পরিচিত করিয়ে দেয়, যা পরিবারিক দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করে তোলে। নির্বাচনের পর থেকেই খোকন এবং সাদিক আব্দুল্লাহর মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত বাড়তে থাকে।


বর্তমান পরিস্থিতিতে, খোকন পরিবার বরিশালে রাজনৈতিকভাবে অনেকটা নিখোঁজ। খোকন ও তার পরিবার সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন, যার ফলে লুনার এই পদক্ষেপ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।


লুনার পোস্টের পর থেকে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ ধরনের পদক্ষেপ কর্মীদের জন্য বিপজ্জনক। তালিকা প্রকাশ করার ফলে তারা মামলার মুখোমুখি হতে পারেন।” 


এছাড়া, দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা লুনার পদক্ষেপকে অমানবিক বলে উল্লেখ করেছেন। এমডি রাজু ইসলাম মন্তব্য করেছেন, “এভাবে নাম-পরিচয় প্রকাশ করে আরও বিপদে ফেলেছেন।” একইসঙ্গে, খান মাহাদী হাসান বলেছিলেন, “এটা মাথায় ফুঁ দিয়ে মামলার আসামি করার সুযোগ করে দিল।”


খোকন সেরনিয়াবাত বরিশালে একসময় শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তার পতনের পর থেকে পরিবারটির অবস্থান অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। সরকারের কঠিন সময়ে তারা পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা তাদের রাজনৈতিক দুর্বলতা নির্দেশ করে। 


অভিযোগ উঠেছে যে, লুনার পোস্টের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেছেন, “লুনার কার্যকলাপ দুঃখজনক। তাঁরা পারিবারিক দ্বন্দ্বে মেতে আছেন, অথচ দলের বিপদের সময় এই ধরনের কাজ করা উচিত নয়।”


এছাড়া, মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুলও লুনার কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “এটি দলের জন্য ক্ষতিকর। সকলের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন, কিন্তু লুনার এই পদক্ষেপে ঐক্য বিনষ্ট হচ্ছে।”


লুনার পোস্টের ফলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন একটি অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি। তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে এবং অনেকে পালানোর চিন্তা করছেন। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না বলেন, “এভাবে নাম প্রকাশের ফলে অনেকেই পালানোর চেষ্টা করছেন। এটা তাদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”