বায়তুল মোকাররমের পলাতক খতিবের গোপন আশ্রয় গোপালগঞ্জে

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: শনিবার ৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:৩৭ অপরাহ্ন
বায়তুল মোকাররমের পলাতক খতিবের গোপন আশ্রয় গোপালগঞ্জে

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন, যিনি আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন, বর্তমানে গোপালগঞ্জে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। গত ২৬ জুলাইয়ের পর থেকে তিনি আর বায়তুল মোকাররম মসজিদে উপস্থিত হননি, যা দেশের ধর্মীয় মহলে ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।


সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে রুহুল আমিনের পলাতক হওয়ার ঘটনা সামনে আসে। খতিব রুহুল আমিন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বায়তুল মোকাররমের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তার এই নিখোঁজ হওয়া এবং গোপালগঞ্জে অবস্থান করার খবরটি অনেকের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। 


মসজিদ কমিটির একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ জুলাইয়ের শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে মুফতি রুহুল আমিনকে আর মসজিদে দেখা যায়নি। সাধারণত, তিনি নিয়মিতভাবে প্রতিদিনের নামাজ এবং অন্যান্য ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু ওই দিনের পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। খতিবের হঠাৎ করে এই পলাতক হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে মসজিদের মুসল্লিরা এবং ধর্মীয় মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।


খবরের সূত্রগুলো জানায়, মুফতি রুহুল আমিন বর্তমানে গোপালগঞ্জের একটি অজ্ঞাত স্থানে অবস্থান করছেন। তবে তিনি সেখানে কি উদ্দেশ্যে অবস্থান করছেন এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি, তা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। গোপালগঞ্জের স্থানীয় কিছু লোকও তার সেখানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন, কিন্তু তার সঠিক অবস্থান বা নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো তথ্য তারা দিতে পারেননি।


মুফতি রুহুল আমিনের পলাতক হওয়ার কারণ হিসেবে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট মামলা বা অভিযোগ নেই, তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সরকারের পতনের পর সৃষ্ট পরিস্থিতি তাকে পলাতক হতে বাধ্য করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিছু সূত্র মতে, রাজনৈতিক উত্তাপ থেকে বাঁচতে এবং নিজের নিরাপত্তার জন্যই তিনি গোপালগঞ্জে আশ্রয় নিয়েছেন। 


ধর্মীয় মহলে মুফতি রুহুল আমিনের এই আচরণ নিয়ে নানা মত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে, যেখানে তিনি নিজেকে নিরাপদ রাখতে চান। অন্যদিকে, অনেকেই মনে করেন, এভাবে হঠাৎ করে পলাতক হওয়া একজন খতিবের জন্য সম্মানের বিষয় নয় এবং এটি দেশের ধর্মীয় মহলের জন্য একটি বড় ধাক্কা।


বায়তুল মোকাররম মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রদান করেনি। তবে, তারা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং মুফতি রুহুল আমিনের অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য ধর্মীয় নেতারাও এই ঘটনার দিকে নজর রাখছেন এবং মুফতি রুহুল আমিনের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।


এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই আশা করছেন, মুফতি রুহুল আমিন দ্রুত তার অবস্থান পরিষ্কার করবেন এবং দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির লক্ষ্যে তার ভূমিকা পুনরায় গ্রহণ করবেন। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবেশে তার এই নিখোঁজ হওয়া বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।