সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সমর্থকদের মধ্যে অন্তত ১৬২ জনকে হত্যা বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান ওয়ার মনিটর। সংস্থাটি গতকাল শুক্রবার জানায়, নতুন সরকারের নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর আসাদপন্থি বিদ্রোহীদের অতর্কিত হামলার পর এই দমন অভিযান চালানো হয়। হামলায় বহু হতাহত হয়, এরপর নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার বাহিনী আলাউইত সম্প্রদায়ের বিদ্রোহীদের ধরে ধরে হত্যা বা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। তিনি বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি তারা আত্মসমর্পণ না করে, তাহলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা দেশের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ করেছে এবং এ জন্য কঠোর প্রতিক্রিয়া আসবে, যা প্রতিরোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণের জন্য বিদ্রোহীদের সতর্ক করেছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে হঠাৎ করে বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দুই পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগেও ওই এলাকায় প্রাণঘাতী সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল।
সিরিয়ান ওয়ার মনিটরের দাবি অনুযায়ী, বিদ্রোহ দমনে সরকারি বাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং বিরোধীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশেষ করে আলাউইত সম্প্রদায়ের যেসব বিদ্রোহী নতুন সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নতুন প্রশাসন নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
বিদ্রোহীদের দমন অভিযানের ফলে সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। আহমেদ আল-শারার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে আসাদপন্থিদের বিদ্রোহ সেই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে। নতুন সরকার যেকোনো মূল্যে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চায় এবং সে লক্ষ্যে সামরিক অভিযানে গতি এনেছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, সিরিয়ায় আবারও বড় ধরনের রক্তপাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অতীতে সিরিয়ার সংঘাত বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছিল, যা বহু মানুষের প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতি ঘটিয়েছিল। নতুন করে সংঘাত শুরু হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের কিছু অংশ আহমেদ আল-শারার সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করলেও, কিছু দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সিরিয়ার সাধারণ নাগরিকরা এই সংঘাতের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। দীর্ঘদিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো দৃশ্যমান সমাধান নেই। বিদ্রোহীদের দমন ও নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চললেও, দেশটিতে সহিংসতার অবসান কবে হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।