বেক্সিমকোর অর্থ পাচার কেলেঙ্কারি: হাজার হাজার কোটি টাকার প্রমাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২১শে জানুয়ারী ২০২৫ ১০:২৮ অপরাহ্ন
বেক্সিমকোর অর্থ পাচার কেলেঙ্কারি: হাজার হাজার কোটি টাকার প্রমাণ

বেক্সিমকো গ্রুপের অর্থ পাচার ও ব্যাংক জালিয়াতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছে, গ্রুপটি জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণের অর্থ গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তরিত হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের আড়ালে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচারেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি ও এনবিআর সমন্বিতভাবে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। বিএফআইইউ তদন্ত কার্যক্রমের সমন্বয় করছে।


অভিযোগ রয়েছে, সালমান এফ রহমান আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেন। প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম, দুর্নীতি ও মুদ্রা পাচারের তদন্তে যৌথ টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্তকারীদের জানানো হয়েছে, তদন্তের সময় সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন কঠোরভাবে মানতে হবে এবং তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৪ আগস্ট ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হন। ১ সেপ্টেম্বর সিআইডি তার প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার কার্যক্রম অনুসন্ধান শুরু করে। ২২ আগস্ট দুদক তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান চালায়। গ্রুপটির অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়ে অধিকতর তদন্ত শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। 


বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে একটি বৈঠকে আর্থিক অপরাধের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। তিনি শেখ হাসিনা পরিবারসহ বিতর্কিত ১০ শিল্পগোষ্ঠীর আর্থিক অপরাধ তদন্তে গঠিত ১১টি যৌথ টিমকে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তদন্তে অন্তর্ভুক্ত শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, এস আলম গ্রুপসহ অন্যান্য প্রভাবশালী নাম রয়েছে। 


গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকোসহ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী দেশ ও বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসব সম্পদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এসব দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে। 


তদন্তের অংশ হিসেবে বেক্সিমকোর ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক লেনদেন, ঋণের সুবিধাভোগী ও অন্যান্য বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে। সংস্থাগুলো গ্রুপের অর্থনৈতিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। 


অন্যদিকে শেখ হাসিনা পরিবারের আর্থিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ট্রাস্ট, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে পৃথকভাবে অনুসন্ধান চলছে। বেক্সিমকোসহ সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলোর কার্যক্রমে আর্থিক ক্ষতির প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে কাজ করছে যৌথ টিম। অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।