মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তীব্র জনবল সংকটের কারণে ইউনিটটির স্বাভাবিক চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একমাত্র সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও এখানে প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, সহায়ক কর্মীসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা দীর্ঘদিন ধরেই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এতে উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশা বাস্তবে পরিণত হচ্ছে না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও সেই অনুযায়ী আধুনিক অবকাঠামো ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। সরজমিনে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীর দীর্ঘ লাইন, কিন্তু চিকিৎসক সীমিত। এতে রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। রোগীরা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে একজন ডাক্তারের পেছনে ২০০-৩০০ রোগী পর্যন্ত দীর্ঘ সারি দেখা যায়। ফলে চিকিৎসাসেবা কাঙ্ক্ষিত মানে পৌঁছাতে পারছে না।
সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামের রোগী আক্তার হোসেন বলেন, “টিকিট কেটে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। কখন ডাক পড়বে বুঝতে পারছি না। গরমে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এভাবে রোগ কমবে কি?”
চা বাগান এলাকার বাসিন্দা সুকেন তাতী অভিযোগ করে বলেন, “আমার এলার্জির সমস্যা। হাসপাতালে এসে জানতে পারলাম চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। বাধ্য হয়ে ফার্মেসির ওষুধের উপর ভরসা করি।”
হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই। মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল হোসেন জানান, “আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম, পরে জানতে পারলাম সপ্তাহে একদিন গাইনি ডাক্তার সিজার করেন। আমাদের কোনো উপায় না থাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হয়েছে।”
হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও রয়েছে একই চিত্র। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় ডেন্টাল সার্জন, নার্সিং সুপারভাইজার এমনকি স্যাকমোরা প্রেসক্রিপশন লিখতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে সচেতন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, হাসপাতালের ১২টি কনসালটেন্ট পদের মধ্যে ৮টি শূন্য। মেডিকেল অফিসার পদে সাতজন থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। ওয়ার্ড বয়, অফিস সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর, স্বাস্থ্য সহকারীসহ পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় চিকিৎসাসেবা আরও ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিনথিয়া তাসমিন বলেন, “যথেষ্ট জনবল না থাকায় সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা একাধিকবার জনবল চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।”
মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন মো. মামুনুর রহমান বলেন, “শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, সারা জেলার হাসপাতালেই জনবল সংকট রয়েছে। আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”
ভুক্তভোগীরা দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।