কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার নামে এক কৃষকের ২০ শতাংশ পৈত্রিক জমি জোরপূর্বক দখল ও বনায়নকৃত প্রায় ১৭৫টি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় দেবীদ্বার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক হাবিবুর রহমান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্কুলের জন্য জমি না দেওয়ায় হাবিবুর রহমানের ওপর শুরু হয় চাপ ও হুমকি। সম্প্রতি রাতের আঁধারে ভেক্যু দিয়ে তার জমির মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করা হয় এবং প্রকাশ্যে শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়। জীবননাশের হুমকিতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিমতপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় কয়লা ব্যবসায়ী মো. শাহনেওয়াজ শাহীন ও তার সমর্থকরা জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিতে শাহনেওয়াজ শাহীন স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। গ্রামের কয়েকজনের সম্মতিতে জমি নির্ধারণের সময় হাবিবুর রহমানের জমির একটি অংশে রাস্তা নির্মাণের প্রয়োজন হলে কিছু গাছ কাটা হয়। কিন্তু এখন তাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমার ২০ শতাংশ পৈত্রিক জমি জোর করে নিতে চায় শাহীন ও তার সমর্থকরা। আমি রাজী না হওয়ায় ৯ সেপ্টেম্বর তারা প্রথমে ২৫টি গাছ কেটে ফেলে, পরে ২৫ অক্টোবর আরও ১৬০টি গাছ কেটে নেয়। থানায় অভিযোগ করার পরও হুমকি অব্যাহত থাকায় জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।’
ভুক্তভোগীর আত্মীয় মো. সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা বললেও উদ্দেশ্য আসলে খাসজমি দখল করে এবং সৌন্দর্য বর্ধনে হাবিবুর রহমানের জায়গা নিয়ে মাছের প্রজেক্ট করা। কারণ, এলাকায় ইতোমধ্যে অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে কামিল মাদ্রাসা, সাইচাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও চান্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাস্তাঘাট নেই, অনুন্নত একটি এলাকা।
তবে স্থানীয় বাবুল মিয়া, জাহাঙ্গীর আলম, নজরুল ইসলাম ও শরীফ হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, গ্রামবাসী ৯৯ শতাংশ জমির মধ্যে ২২ শতাংশ খাস ও ৭৭ শতাংশ মালিকানাধীন জমি নিয়ে স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। হাবিবুর রহমানের জমির বিপরীতে বিনিময়ে আরও ১৭ শতাংশ জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আগামী ৩০ অক্টোবর থানায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হলে এ এলাকার মানুষ আলোকীত হবে।
৬নং ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন রুহুল বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন এবং উভয় পক্ষকে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন।
দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন ‘অভিযোগ পেয়েছি। উভয় পক্ষকে আগামী শুক্রবার থানায় ডেকেছি, সমাধান না হলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, গাছ কাটার বিষয়টি জানতে পেরে এসিল্যান্ডকে বলে দিয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য।