প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১৯
একসময় নওগাঁ শহরের অলিগলিতে প্যাডেল চালিত রিকশার ‘ক্রিং ক্রিং’ আর ‘টুং টাং’ বেলের শব্দ ছিল মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী। শত শত পরিবারের জীবিকা নির্ভর করত এই রিকশার চাকার ওপর। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সেই ঐতিহ্য আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। শহরের ভেতর এখন চোখে পড়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার আধিপত্য।
প্যাডেল রিকশায় পরিশ্রম বেশি হলেও আয় কম হওয়ায় চালকরা ঝুঁকছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দিকে। কম শ্রমে বেশি আয়ের সুযোগ থাকায় শহর ও গ্রামাঞ্চলে অটোরিকশার সংখ্যা দ্রুত বেড়ে গেছে। ফলে যাত্রীদের মধ্যেও এই বাহনের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়েছে।
প্যাডেল রিকশার চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখন আর প্যাডেলের রিকশায় উঠতে চায় না। আগে দিনে ২০০-৩০০ টাকা আয় হলেও এখন সেটা নেমে এসেছে ৮০-১০০ টাকায়। এত অল্প আয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক মিঠু হোসেন জানান, অটোরিকশা চালিয়ে দিনে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায়। কিস্তিতে সহজে কেনা যায় বলেই এই বাহন এখন চালকদের জন্য আরও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে।
নওগাঁয় বর্তমানে প্রায় ৫০টি কারখানায় প্রতি মাসে গড়ে ২৫০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা তৈরি হচ্ছে। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে অনেক। রড ও শিটের দাম বিগত দুই বছরে ৩০-৪০ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় কারখানা মালিকদের খরচও বেড়েছে।
কারখানা মালিক শরিফুল ইসলাম জানান, একটি অটোরিকশার বডি তৈরিতে খরচ পড়ে অন্তত ৮০ হাজার টাকা আর ব্যাটারি সহ পুরো অটোরিকশার খরচ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অনেক সময় এনজিও থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হয় কারণ ব্যাংক ঋণ পেতে জমি বা ঘরের কাগজ লাগে যা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।
নওগাঁ বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাহিদা বাড়ায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারখানার সংখ্যা বেড়েছে এবং বিসিক এ শিল্প সম্ভাবনা আরও বাড়াতে কারিগরি প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
একসময়ের অপরিহার্য বাহন প্যাডেল রিকশা এখন শহরে হাতে গোনা কয়েকটিতে সীমাবদ্ধ। একসময় যে রিকশা নির্মাণে ৫০টিরও বেশি কারখানা সক্রিয় ছিল এখন তা প্রায় হারিয়ে গেছে। আগামী প্রজন্মের কাছে হয়তো এটি রয়ে যাবে কেবল ইতিহাসের পাতায় কিংবা জাদুঘরের প্রদর্শনীতে।