প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:১৪
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের কালিঘাট রোডে দেখা মেলে প্রতিবন্ধী খলিলুর রহমানের। আগে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালালেও সম্প্রতি বাদাম বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। হাতে ছোট ছোট পলিথিনের প্যাকেটে বাদাম নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ফেরেন এই বিক্রেতা।
জন্মলগ্ন থেকেই খলিলুর রহমানের দুই হাত এবং এক পা বিকলাঙ্গ। চিকিৎসায় বহু টাকা খরচ করেও সুস্থ হতে পারেননি। সংসারে অভাব আর শারীরিক সমস্যায় একসময় তিনি বাধ্য হন ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে। পরে পরিবারের জন্য এবং নিজের আত্মসম্মানের তাগিদে এই পেশা ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন জানান, তিনি নিয়মিত অসহায় মানুষদের সাহায্য করেন। সম্প্রতি খলিলুর রহমান তার দোকানে মাংস নিতে এলে তাকে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ছোট ব্যবসা শুরু করতে পরামর্শ দেন এবং কিছু পুঁজি দেন। সেই মূলধন নিয়েই বাদামের ব্যবসা শুরু করেন খলিলুর রহমান।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২০০ প্যাকেট বাদাম বিক্রি করে খলিলুর রহমান। দৈনিক বিক্রি প্রায় ২ হাজার টাকা হলেও লাভ থাকে ৫০০ টাকা। সংসার চালানো, বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়াশোনা ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে এই আয় যথেষ্ট নয়। তাই তিনি স্থানীয়দের আহ্বান জানিয়েছেন তার কাছ থেকে বাদাম কিনে সহযোগিতা করার জন্য।
ব্যবসায়ী মুহম্মদ কালু গাজী জানান, আগে খলিলুর রহমান ভিক্ষা করলেও এখন তিনি বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ পরিবর্তন তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সমাজের অন্যদের জন্য এটি একটি উদাহরণ হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খলিলুর রহমান বলেন, ভিক্ষা করে দিনে অনেক টাকা পেলেও তৃপ্তি পেতেন না। মানুষের কাছে হাত পাততে লজ্জা হতো। এখন নিজের পরিশ্রমে অল্প আয় করেও তিনি মানসিক শান্তি পান। এতে তার আত্মসম্মান ও সামাজিক মর্যাদা বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও জানান, আর্থিক সহযোগিতা পেলে তিনি এই ব্যবসাকে আরও বড় করতে চান। এতে তার সন্তানদের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ বহন সহজ হবে। সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিদের প্রতি তিনি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, প্রতিবন্ধী খলিলুর রহমানের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করা সমাজের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।