প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৫, ২০:২৯
উত্তর জনপদের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধন হলো বহুল আলোচিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে তিস্তার বুকে নির্মিত এই সেতু।
বুধবার দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে সেতুর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই হাজারো মানুষ দলে দলে সেতুতে উঠে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
সেতুতে ওঠা মানুষের আনন্দ, গান ও ছবি তোলার ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতুর দ্বার উন্মুক্ত হওয়ায় দুই জেলার মানুষের মুখে মুখে ছিল আনন্দের ঝলক।
উদ্বোধনের আগে থেকেই সেতুর পাড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোর থেকেই হাজারো মানুষ পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় তাদের চোখে মুখে আনন্দের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। নানা জটিলতা ও সময়ক্ষেপণের পর অবশেষে ১১ বছর পর চালু হলো উত্তরবঙ্গের এই স্বপ্নের সেতু।
এলজিইডি জানায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে সেতুটি। ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের এই পিসি গার্ডার সেতু এলজিইডির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
সেতুকে ঘিরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক, ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের অন্তত ১০টি বাজার সরাসরি সংযুক্ত হয়েছে। এতে কৃষি ও শিল্পপণ্যের পরিবহন সহজ হবে, গড়ে উঠবে ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা এবং ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরের দূরত্ব কমবে ৪০-১০০ কিলোমিটার।
তবে সেতুর নামকরণ নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর। তাদের দাবি, সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা ও আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধা শরিতুল্যাহ মাস্টারের নামেই হওয়া উচিত ছিল এ সেতুর নামকরণ। একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েও তারা দাবি তুলেছিলেন।
তবে সরকার সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করে সেতুর নামকরণ করেছে ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’। এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সেতুর উদ্বোধন ঘিরে দুই জেলার মানুষের মনে এখন শুধুই উচ্ছ্বাস। তারা মনে করছেন, এই সেতু উত্তর জনপদের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিল।