প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৫
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চাকরিতে উপজাতি বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার প্রদানের বিধানকে সংবিধানবিরোধী দাবি করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের হয়েছে। এ রিটে বলা হয়েছে, একচেটিয়া উপজাতিদের অগ্রাধিকার দেওয়া সংবিধানের সমঅধিকার ও বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রিটটি দায়ের করেন খাগড়াছড়ি সদরের বাসিন্দা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদ উল্লাহ। তার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এম. জি. মাহমুদ (শাহিন)। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান (মিলন), ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আল-ফাইশাল সিদ্দিকী ও মো. ইমদাদুল হানিফ।
গত ৩১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯-এর ধারা ৩২(২) এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালার ৪(২) কেন সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করা হবে না।
রুলে আরও জানতে চাওয়া হয়েছে, ১২ জুন ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, যেখানে উপজাতিদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, কেন কর্তৃত্ববিহীন ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না। আদালত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং খাগড়াছড়ি বাজার ফান্ড প্রশাসককে চার সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
রিটে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়োগে উপজাতিদের অগ্রাধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলো অস্পষ্ট এবং প্রয়োজনীয় সামঞ্জস্য নির্ধারণে কোনো নির্দেশনা দেয় না। এতে সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত সমঅধিকার, বৈষম্যহীনতা, সমান সুযোগ ও ন্যায়সঙ্গত আইনের নিশ্চয়তা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
রিটকারী আসাদ উল্লাহ অভিযোগ করেন, বছরের পর বছর পার্বত্য অঞ্চলের জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে উপজাতিদের একচেটিয়াভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এতে বৃহৎ বাঙালি জনগোষ্ঠী চাকরির প্রতিযোগিতায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে উপজাতিদের জন্য ১ শতাংশ কোটা থাকলেও পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় উপজাতিদের। ফলে বাঙালিরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা সংবিধানবিরোধী।
আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রিট শুধু খাগড়াছড়ি নয়, পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকরির কাঠামোতে বৈষম্যরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আদালতের চূড়ান্ত রায় নিয়োগ নীতি ও মৌলিক অধিকার প্রয়োগের মধ্যে ভারসাম্য নির্ধারণে একটি দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।