মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত মণিপুরী ললিতকলা একাডেমির উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রভাস চন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় বৈচিত্র্য দিবস ২০২৫-এর অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিল্পীদের সম্মানী ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় একাডেমির অধীনস্থ ৭ জন শিল্পী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই প্রভাস চন্দ্র সিংহ মৃদঙ্গ নৃত্যের জন্য ধীরেন্দ্র কুমার সিংহ, লিমন সিংহ (লিটু), নিশান সিংহ, বিধান সিংহ, সুরজিত সিংহ, সুমিতা সিংহ এবং নিরব সিংহকে ঢাকায় নিয়ে যান। তারা ফকিরাপুলের একটি হোটেলে অবস্থান করলেও ২৭ জুলাই অনুষ্ঠান শেষে রাতেই হোটেল বুকিং বাতিল করে শিল্পীদের নিজ দায়িত্বে বাড়ি ফিরতে বলেন প্রভাস চন্দ্র সিংহ। রাত ১২টার পর গাড়ি খুঁজতে গিয়ে শিল্পীদের সাথে দেখা হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সিনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (সংগীত) ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম শামীম আকতারের। তিনি তাদের অবস্থা জেনে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।
পরে এস এম শামীম আকতারের মাধ্যমে শিল্পীরা জানতে পারেন, প্রতিজন শিল্পীর জন্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা সম্মানী এবং দলীয়ভাবে ১৪ হাজার টাকা যাতায়াত ভাড়া বরাদ্দ ছিল। কিন্তু তাদের মোট ২৪ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়, যার মধ্যে ৭ হাজার টাকা মাইক্রোবাস ভাড়া দিতে বলা হয়। অভিযোগকারীরা দাবি করেন, সম্মানী ও যাতায়াত বাবদ অর্থ থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানেও প্রভাস চন্দ্র সিংহ একইভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। সেখানে ৫৫ জন শিল্পী ও কলাকুশলীর প্রত্যেকের জন্য ২ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কম অর্থ দেওয়া হয়।
অভিযোগকারীরা আরও জানান, একাডেমিতে আয়োজিত বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানেও স্থানীয় শিল্পীদের কোনো সম্মানী দেওয়া হয়নি, বরং ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে। শিল্পী ধীরেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আসমা সুলতানা নাসরীনের উপস্থিতিতে প্রভাস চন্দ্র সিংহ সম্মানী ফেরতের আশ্বাস দেন, তবে এখনো কিছু ফেরত দেননি।
অভিযুক্ত প্রভাস চন্দ্র সিংহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। অভিযোগকারী নিজেই নিজের পদবি গোপন করেছেন, যা অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আসমা সুলতানা নাসরীন জানান, উভয়পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই চলছে।
১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মণিপুরী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও লালনে কাজ করে আসছে।