প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৪৭
ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, যা ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়েছে। এতে অনেক কৃষক এখনও জমিতে নতুন করে ধান রোপণ করতে পারছেন না এবং দিশেহারা অবস্থায় পড়েছেন। ঝিনাইদহ সদর, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, হরিণাকু-ু ও শৈলকূপা উপজেলার সবজি ক্ষেত, ধানের বীজতলা এবং সদ্য রোপণকৃত আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ষষ্ঠি চন্দ্র রায় জানান, কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের সহায়তায় বাঁধ অপসারণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে এবং বাকি এলাকাগুলোর জন্যও কাজ চলছে। বাঁধ অপসারণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে যাতে কৃষকদের ক্ষতি কমানো যায়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের তেতুলতলা, বিষয়খালী, মহারজপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের জমিতে এখনও পানি জমে থাকার কারণে নতুন করে ধান রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানকার কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, তার ধান ক্ষেত পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, কিছু ব্যক্তি পুকুর কেটে মাছ চাষ করায় পানি খাল দিয়ে নিষ্কাশন করতে পারছে না, যার কারণে জমিতে পানি জমে থাকে।
শৈলকূপা উপজেলার চড়িয়ারবিল গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, তার মরিচ, পটল ও বেগুনসহ সবজি ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তিনি পানির নিচে থাকা গাছগুলো শুকিয়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাহিদ হাসানও একই সমস্যার মুখোমুখি।
কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরের কৃষকরাও টানা বৃষ্টিতে তাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। অনেকের জমিতে ধান তলিয়ে যাওয়ায় তারা নতুন করে ধানের চারা রোপণ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তবে চারা সংগ্রহে সমস্যার মুখোমুখি। এসব সমস্যায় পড়া কৃষকরা আশা করছেন দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝিনাইদহের কৃষকরা বন্যার পানির কারণে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। পানি নিষ্কাশনে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কৃষকদের এই ক্ষতি আরো বেড়ে যেতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে এবং কৃষকদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগের তৎপরতায় বাঁধ অপসারণ ও পানি নিষ্কাশনের কাজ অব্যাহত রয়েছে, যা আশাকরা হচ্ছে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বস্তি দেবে। তবে এই পরিস্থিতি থেকে কৃষকদের রক্ষা করতে আরো বেশি মনোযোগের প্রয়োজন রয়েছে। ঝিনাইদহের কৃষকরা এক সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা নতুন ফসল রোপণের সুযোগ পায় এবং বন্যার ক্ষতি থেকে ফিরে আসতে পারে।