প্রকাশ: ৭ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৪
গোপালপুর উপজেলার কলেজছাত্র হৃদয় গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার এক বছর পার হলেও তার লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে গাজীপুরের শরিফ মেডিক্যাল হাসপাতালের সামনে বিজয় মিছিল থেকে পুলিশের গুলিতে আহত হৃদয়কে স্থানীয় পুলিশ আটকের পর গায়েব করা হয়। এর পর থেকে পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজে ভর করেছে।
হৃদয়ের মা রেহেনা বেগম আজও ছেলের ফিরে আসার আশায় প্রতীক্ষায় আছেন। তিনি চান অন্তত হৃদয়ের অস্থি হাড় ফিরে পেয়ে ঘরের উঠোনে দাফন করতে পারেন। হৃদয়ের বাবা, যিনি ভ্যান চালিয়ে জীবন নির্বাহ করেন, শোক ও আর্থিক সংকটে দুরবস্থায় পড়েছেন। পরিবারটির ঋণ শোধেরও সামর্থ্য নেই।
হৃদয়ের ভগ্নিপতি মোহাম্মদ ইব্রাহীম হত্যা মামলা করেছেন এবং অভিযোগ করেন, পুলিশ দলই হৃদয়কে ঘিরে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালায় ও লাশ গুম করার চেষ্টা করে। পুলিশের ওই ১০-১২ জন সদস্য হৃদয়কে গ্রেফতার করে এবং তার লাশ তুরাগ নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে মামলার তদন্তে উঠে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর কড্ডা ব্রিজ এলাকায় তুরাগ নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তিন কিলোমিটার এলাকা তল্লাশি চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা উদ্ধার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মামলায় ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গাড়ির চালক রহিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে তুরাগ নদীতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
নিহত হৃদয়ের বড় বোন জেসমিন আক্তার বলেন, হৃদয় অভাবের সংসারে লেখাপড়ার খরচ চালাতে অটোরিকশা চালাতো। লাশ না পাওয়ায় তার শহীদের মর্যাদা পায়নি। পরিবারের তরফ থেকে কোনো সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
হৃদয়ের পরিবারের সবাই শুধু তার মরদেহ ফিরে পেতে চান এবং যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছেন।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছিল, যা দেশের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পরিবারের আশা ও যন্ত্রণা অব্যাহত থাকবে। এই মানবিক ট্রাজেডি দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।