প্রকাশ: ৪ আগস্ট ২০২৫, ১১:২২
দেবীদ্বারে ভয়াল ৪ আগস্ট। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক রক্তাক্ত দিন। ২০২৪ সালের এই দিনে ছাত্র-জনতা এবং ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের মধ্যে ঘটে যায় সংঘর্ষ, যে সংঘর্ষ কেড়ে নেয় তরুণ স্বেচ্ছাসেবক নেতা রুবেলের প্রাণ, আর শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দেয় দশম শ্রেণির ছাত্র আবুবকরকে।
সকাল থেকে দেবীদ্বার উপজেলা সদরে জড়ো হতে থাকে ছাত্রজনতা। তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে দুপুরের দিকে নামে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও মূল দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা। দুপুর ২টার দিকে পৌরসভার মাটিয়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেলকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়।
রুবেল ছিলেন বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের একমাত্র ছেলে এবং পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে স্ত্রী হ্যাপি আক্তার দুই সন্তান নিয়ে বিপর্যস্ত। রুবেলের মা ও স্ত্রী দাবি করেছেন, হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।
অন্যদিকে, একই দিনে দুপুর দেড়টার দিকে কালাচাঁন্দ সুপার মার্কেট এলাকায় হামলার শিকার হয় শিক্ষার্থী আবুবকর। তাকে রামদা, রড, গ্যাস পাইপ ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। মাথার খুলিতে ভয়ানক আঘাত লাগে, রডের আঘাতে ছিঁড়ে যায় হাত-পায়ের রগ।
আবুবকর এখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। পরিবারের দাবি, সে তার বাবা-মাকে চিনলেও কথা বলতে পারে না, নাম ধরে ডাকতে পারে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তার অসহায় পিতা-মাতা।
সেদিনের সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত আন্দোলনকারী আহত হন। অনেকেই আজও সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি। এলাকায় আজও আতঙ্ক বিরাজ করছে, বিশেষ করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর মধ্যে।
উল্লেখ্য, সেদিনের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে একাধিক মামলা। ভুক্তভোগীরা আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এরই মধ্যে দেবীদ্বারের নয়জন শহীদ হিসেবে গেজেটভুক্ত হয়েছেন, বাকিদের জন্যও দাবী অব্যাহত রয়েছে।
চারদিকে যখন ন্যায়বিচারের আকুতি, তখনও নিঃশব্দে কাঁদছে রুবেল ও আবুবকরের পরিবার—বিচারের আশায়।