প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১১:৩
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের হরিণছড়া চা বাগানে সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে পড়ে যাওয়া একটি মোবাইল ফোন তুলতে গিয়ে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় একে একে প্রাণ হারালেন চারজন যুবক। এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাতে সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকার একটি চা শ্রমিক পল্লিতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, মোবাইল ফোনটি সেপটিক ট্যাংকে পড়ে যাওয়ার পর একজন তা তুলতে নামেন এবং কিছু সময়ের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে আরও চারজন সেপটিক ট্যাংকে নামেন এবং একে একে তারাও অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা তাদের সবাইকে উদ্ধার করে দ্রুত মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রানা নায়েক (১৭), শ্রাবণ নায়েক (১৯), কৃষ্ণ রবিদাস (২০) ও নিপেন ফুলমালি (২৭) নামের চার যুবককে মৃত ঘোষণা করেন। এদের সবাই হরিণছড়া চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের সন্তান। আহত অপর একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। মরদেহগুলো বর্তমানে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
চা বাগান এলাকায় সেপটিক ট্যাংক সংক্রান্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল হওয়ায় এমন দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে বলে জানান স্থানীয়রা। তবে এতজন একসঙ্গে প্রাণ হারানোর ঘটনা এই অঞ্চলে নজিরবিহীন। দুর্ঘটনার খবরে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। চা শ্রমিক পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, দুর্গম এলাকাগুলোতে যেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্ধারকর্মী ও আধুনিক সরঞ্জাম থাকে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে। অল্পবয়সী এই চার যুবকের এমন করুণ মৃত্যু এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সেপটিক ট্যাংকের কাজ করতে গিয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে চা বাগানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
চা বাগানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের আগে যেন প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও গ্যাস সংক্রান্ত ঝুঁকি পর্যালোচনা করা হয়, এ বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।