প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১৭:৫৪
কোনো ট্যাগ পাওয়া যায়নি
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এশিয়ার একমাত্র ‘আফ্রিকান টিকওক’ বৃক্ষটি প্রায় ৯২ বছর ধরে জীবিত থাকার পর এখন মরা অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার এই উদ্যানে প্রবেশপথের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় একশ ফুট উঁচু ও আট ফুট ব্যাসের এই বিশাল বৃক্ষটি এখন সম্পূর্ণ ডালপালাহীন। গাছটির গোড়ায় পচন ধরেছে, ডালের শুষ্ক অংশে বাসা বেঁধেছে লতা ও অর্কিড। ঝড়বৃষ্টিতে মাঝে মাঝে শুকনো ডাল ভেঙে পড়ায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে পড়ছেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গাছটির নিচ দিয়ে চললে বা পাশে দাঁড়ালে কেউ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়তেন বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে ‘অজ্ঞান গাছ’ নামে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই গাছে কার্বলিক অ্যাসিড ও ক্লোরোফর্ম জাতীয় উপাদান থাকায় অনেকের মাথা ঘোরা বা ঘুমঘুম ভাব হতে পারে। উদ্যান ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা গাছটি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন, ছবি তোলেন এবং একে ঘিরে গড়ে ওঠে একটি ঐতিহাসিক আগ্রহ।
১৯৩০ সালে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে লাউয়াছড়ায় চাপালিশ, সেগুন, গর্জনসহ অন্যান্য গাছের পাশাপাশি আফ্রিকান টিকওকের দুটি চারা রোপণ করা হয়। ২০০৬ সালে ঝড়ে একটি গাছ ভেঙে যায় এবং তার গুঁড়ির অংশ এখনও উদ্যানে স্মৃতিস্বরূপ পড়ে আছে। আর বেঁচে থাকা গাছটিও ২০২২ সাল থেকে পাতা ঝরাতে শুরু করে এবং বর্তমানে সম্পূর্ণরূপে মরা অবস্থায় রয়েছে।
গাছটি সংরক্ষণে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বংশবিস্তারের চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। কারণ গাছটি ফলন দেয় না, ফুল ঝরে যায় এবং বীজ থাকে না বলে নতুন চারা উৎপাদন অসম্ভব হয়ে পড়ে। পূর্বে কাটিং পদ্ধতিতে বংশ বিস্তারের চেষ্টা করেও ব্যর্থতা দেখা দেয়।
এদিকে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই গাছটি এখনও কাটা সম্ভব নয়, কারণ এতে পাখির বাসা ও জীববৈচিত্র্যের উপকার হয়। এমনকি কাটতে হলে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়, যা এখনো নেওয়া হয়নি।
তবে বর্তমানে গাছটি যে অবস্থায় রয়েছে তা পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গাছটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই দ্রুত এর ঝুঁকি নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা ও ভ্রমণপিপাসুরা।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এই ধরনের দুর্লভ বৃক্ষ শুধু উদ্যান নয়, দেশের জন্যও একটি মূল্যবান ঐতিহ্য। তাই এটিকে শুধু কাটা নয়, সংরক্ষণের বিকল্প চিন্তা করা উচিত যাতে আগামী প্রজন্মও এ গাছের ইতিহাস জানতে পারে এবং দেখার সুযোগ পায়।