প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১৬:৫৪
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দরে অবৈধভাবে মজুত রাখা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার চাল, ডাল ও ধান জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ভারতীয় আমদানিকৃত খাদ্যশস্য রাখার অভিযোগে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, যা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাইক্রো গ্রীন এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল হাকিম মণ্ডল ও ম্যানেজার হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে হাকিমপুর থানায় মামলা রুজু হয়।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায়ের নেতৃত্বে চালানো অভিযানে তিনটি গুদামে বিপুল পরিমাণ মজুতকৃত ধান ও চাল পাওয়া যায়। গুদামে উপস্থিত খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোঃ সোহেল আহমেদ জানান, প্রথমে অনুমানের ভিত্তিতে ১৯৩৩ মেট্রিক টন ধান এবং ২৭১ মেট্রিক টন চাল ও ৪৭ মেট্রিক টন ডাল পাওয়ার কথা গণমাধ্যমে জানানো হয়েছিল।
তবে পরদিন এক্সপার্টদের সহায়তায় নির্ভুল হিসাব নিশ্চিত করা হয়, যেখানে দেখা যায় গুদামে মজুত ছিল ১৪৯ দশমিক ৭৭৬ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল, ৩২ দশমিক ৮৩০ মেট্রিক টন মসুর ডাল এবং ১১৫৫ দশমিক ৭৭৯ মেট্রিক টন দেশি ধান। সব মিলিয়ে জব্দকৃত খাদ্যপণ্যের বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা নিয়ে তদন্তে নেমেছে প্রশাসন।
এই অভিযানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তিনটি গুদাম সিলগালা করেন এবং খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি হাকিমপুর থানায় রুজু করা হয়েছে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন বলে জানা যায়।
এই ঘটনায় স্থানীয়ভাবে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অভিযানের পরদিন দেওয়া তথ্য ও মামলা এজাহারে পণ্যের পরিমাণের অসামঞ্জস্য লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জানান, পরবর্তী যাচাই-বাছাই ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার ভিত্তিতে নির্ভুল হিসাব নির্ধারণ করেই মামলা করা হয়েছে।
হাকিমপুর থানার ওসি নাজমুল হক জানান, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তার ও অন্যান্য আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রশাসন এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয়দের মতে, হিলি বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই ধরনের অবৈধ মজুত ও বাজার অস্থিরতা সৃষ্টি করা হলে কৃষক ও ভোক্তা উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই তারা দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রশাসনের প্রতি।