প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১১:১২
ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতি গত ২২ এপ্রিলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সিদ্ধান্তে ১৬ জন আইনজীবীর সদস্যপদ বাতিল করেছে। এতে সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী রয়েছেন। সদস্যপদ বাতিলের বিষয়টি সমিতির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হলেও এ সিদ্ধান্তের পেছনে স্পষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি। সমিতির চিঠিতে শুধু জানানো হয়েছে যে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর সমিতির অভ্যন্তরে ও বাইরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বাতিল হওয়া সদস্যদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান রসুল, সাবেক সহ-সভাপতি মঞ্জুর হোসেন ও তার ছেলে মোর্শেদ কামাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম আলম খান কামাল সহ আরো অনেক নামজাদা আইনজীবী রয়েছেন। তাদের দাবি, এই সদস্যপদ বাতিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনি। বিশেষ করে সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের সদস্যপদ বহাল থাকায় সমিতির এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই দ্ব্যর্থহীন ভাবে সমালোচনা করছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির ভর্তি বিষয়ক সম্পাদক আক্কাস সিকদার জানান, প্রাথমিক আলোচনায় ৩০ জন সদস্যের সদস্যপদ বাতিলের কথা উঠেছিল, যাদের মধ্যে বিভিন্ন দলের সমর্থক রয়েছেন। তবে কার্যনির্বাহী কমিটির পূর্ণ সম্মতি ছাড়া এমন বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে কার্যনির্বাহী সদস্য আনিসুর রহমান খান জানিয়েছেন, সদস্যপদ বাতিলের বিষয়ে বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি এবং এটি সাধারণ সভায় উপস্থাপন করার কথা ছিল।
বাতিল হওয়া আইনজীবী কার্তিক চন্দ্র দত্ত সদস্যপদ বাতিলকে অন্যায় ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল বলে অভিহিত করেছেন এবং আইনি পথে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছেন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নাসিমুল হাসান এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই ব্যক্তিরা বিভিন্ন অনিয়ম ও সহিংস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই গঠনতন্ত্র অনুসারে তাদের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
এই ঘটনা ঝালকাঠি জেলা আইনজীবী সমিতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক সংঘাতের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সমিতির কার্যক্রম ও নৈতিকতা রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে চলছে তীব্র মতবিরোধ। আইনজীবী সমাজের জন্য এই বিতর্ক দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
পরিস্থিতি বিবেচনায় সমিতির আগামী কার্যনির্বাহী সভায় বিষয়টি পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আশার কথাও শোনা যাচ্ছে। ততক্ষণ পর্যন্ত এই সদস্যপদ বাতিল বিষয়ক বিতর্ক ঝালকাঠির আইনজীবী সমাজে সরগরম অবস্থা বজায় রাখবে।