প্রকাশ: ৬ জুন ২০২৫, ১১:৩৯
চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন, আহত হয়েছেন আরও অনেকে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা এলাকা। দুর্ঘটনার সময় পর্যটক এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি ছুটে আসছিল ঢাকার দিকে, আর সেতুর ওপর তখন যানজটে আটকে ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং একটি মাইক্রোবাস।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সেতুর বোয়ালখালী অংশে একটি যানবাহন হঠাৎ করে নষ্ট হয়ে গেলে সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজট। এই অবস্থাতেই কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেতুর দিকে এগিয়ে আসে। নিয়ম অনুযায়ী, ট্রেনচালকের সেতুতে ওঠার আগে লাইনম্যানের কাছ থেকে সংকেত নেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
ফলে সেতুর ওপর থাকা যানবাহনগুলো ট্রেনের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অন্তত তিনজনের, যাদের মধ্যে একজন ছিল মাত্র দুই বছর বয়সী শিশু। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ঘটনার পরপরই রেলপথ মন্ত্রণালয় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা। কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন ডিএমই (লোকো), ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার-১ ও বিভাগীয় চিকিৎসক। তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার দায়ে প্রাথমিকভাবে ট্রেনটির গার্ড সোহেল রানা, লোকোমাস্টার গোলাম রসুল, সহকারী লোকোমাস্টার আমিন উল্লাহ এবং অস্থায়ী গেটকিপার মাহবুবকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই দুর্ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলছে দেশের রেল সুরক্ষা ও গেটকিপার ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে। কালুরঘাট সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন এতটা গাফিলতি, সে প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মুখেও। তদন্ত প্রতিবেদনেই হয়তো মিলবে সেই সব প্রশ্নের উত্তর।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতদের পরিবারে চলছে আহাজারি আর অসহায়ত্বের চিত্র। আহতদের সুচিকিৎসা এবং দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।