
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১৮:৪

মৌলভীবাজারের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অনিরাপদ বিদ্যুৎ লাইনে বিপন্ন প্রাণীর মৃত্যু বাড়ছে। গত এক বছরে লাঠিটিলা ও মাধবকুন্ড অঞ্চলে সাতটি লজ্জাবতি বানর এবং তিনটি চশমাপরা হনুমান বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। এই ঘটনাগুলো স্থানীয় পরিবেশবিদদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তারা বলেন, বনাঞ্চলের উন্মুক্ত বিদ্যুৎ লাইনের কারণে বিপন্ন প্রাণীরা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে মাধবকুন্ড ইকোপার্কের প্রধান প্রবেশদ্বার সংলগ্ন এলাকা লজ্জাবতি বানরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। সেখানে রাস্তার দুই পাশে বিদ্যুৎ লাইনের ঝুঁকি এখনও কাটিয়ে উঠা যায়নি।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো ইনসুলেটেড বা প্লাস্টিক মোড়ানো তারের মাধ্যমে এই বিপদ কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বন বিভাগ বারবার অনুরোধ করেও তেমন কার্যক্রম দেখা যায়নি। এই অবহেলার কারণে বনাঞ্চল থেকে বিপন্ন প্রাণীর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং এক সময় লাঠিটিলা ও মাধবকুন্ড বন সম্পূর্ণ প্রাণশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে পরিবেশবাদীরা।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী আবিদ হুসাইন জানান, নিয়মিত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হনুমান মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালে বিদ্যুৎ অফিসে ইনসুলেটেড তার ব্যবস্থার আবেদন করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এর ফলে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীদের বিলুপ্তির আশঙ্কা বেড়েই চলেছে। লজ্জাবতী বানর গবেষক সাবিত হাসানও উল্লেখ করেন, বন উজাড়, পাচার, খাবার ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয় লজ্জাবতী বানরের সবচেয়ে বড় হুমকি।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দলের মুখপাত্র খুরশেদ আলম বলেন, বিদ্যুৎ লাইন থেকে প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত পরিকল্পনার ব্যর্থতার প্রতীক। তিনি বলেন, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে বিপন্ন প্রাণী বিলুপ্তির মুখে পড়বে।

বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিষয়টি তাঁর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানানো হয়নি। তবে পল্লী বিদ্যুৎকে পুনরায় চিঠি দেওয়া হয়েছে ইনসুলেটেড তার ব্যবস্থার জন্য। তারা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণও নিশ্চিত করতে হবে। তারা ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং পরবর্তী সমাধানের জন্য সমীক্ষা করবে। তারপরে নিরোধক বৈদ্যুতিক তার স্থাপন করা হবে।
এভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে নিরাপত্তাহীন বিদ্যুৎ লাইনের কারণে বিপন্ন প্রাণীর মৃত্যু রোধ করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মৌলভীবাজারের বনাঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংকটাপন্ন হবে।