মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ৫নং জায়ফরনগর ইউনিয়নের চম্পকলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম প্রান্তিক মূল্যায়ণ পরীক্ষায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের অনিয়মের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, পরীক্ষার হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ব্ল্যাকবোর্ডে প্রশ্নের উত্তর লিখে দিচ্ছেন এবং মুখে মুখে বলে দিচ্ছেন। একই সময়ে কিছু অভিভাবক সরাসরি পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের খাতায় উত্তর লিখে দিচ্ছেন।
ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার (১৪ মে) ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষার সময়। বিষয়টি ফাঁস করেন বিদ্যালয়েরই আরেক অভিভাবক, যিনি মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রকাশ করেন। এতে শিক্ষার মান এবং শিক্ষকদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ব্ল্যাকবোর্ড থেকে দেখে এবং শুনে তাদের উত্তরপত্র পূরণ করছে। একজন অভিভাবক পাশে বসে পরীক্ষার্থীর খাতায় উত্তর লিখে দিচ্ছেন। ভিডিও ধারণকারী অভিভাবক শিক্ষককে প্রশ্ন করলে শিক্ষক জানান, "যারা পারে না তাদের জন্যই বোর্ডে লেখা হয়েছে।" পরে শিক্ষকরা তড়িঘড়ি করে ব্ল্যাকবোর্ড মুছে দেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সূধনসূত্র ধর জানান, তিনি অসুস্থ থাকায় অফিসকক্ষে ছিলেন। তিনি দায় স্বীকার করে বলেন, “শিক্ষকের এই কাজ ভুল হয়েছে।” তবে তিনি এমন আচরণের যৌক্তিকতা বা নৈতিকতার বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
ঘটনার ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার দীলিপময় দাশ চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রাথমিক তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাবলু সূত্রধর বলেন, “এমন অনিয়ম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার মানোন্নয়নে উপজেলা প্রশাসন সদা তৎপর। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সফিউল আলম জানান, “ঘটনাটি তদন্তাধীন। প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “শিশুদের শেখাতে স্কুলে পাঠানো হয়, অনিয়ম করতে নয়। শিক্ষকরা যদি নিজেরাই উত্তর লিখে দেন, তাহলে তারা কী শিখাবে?”
এই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মূল্যায়নের সুযোগ ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং নৈতিকতার প্রশ্ন উঠে এসেছে।