প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১৭:৫২
নওগাঁর আত্রাই উপজেলা এক সময় ছিল মৃৎ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী ভবানীপুর, রাইপুর, মিরাপুর, সাহেবগঞ্জ, বহলা, পাঁচুপুরসহ নানা গ্রামে ছড়িয়ে ছিল মৃৎ শিল্পীদের কুটির শিল্প। সেই সময় এই অঞ্চলগুলো ছিল মৃৎ শিল্পের রাজধানী, যেখানে অদ্বিতীয় দক্ষতায় মাটির বাসন, হাঁড়ি, পাতিল, প্রদীপ, মূর্তি সহ নানা ধরনের জিনিস তৈরি হত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন এসেছে, এবং মৃৎ শিল্প আজ বিলীনের পথে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি এবং আধুনিক শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম ও দস্তা দিয়ে তৈরি তৈজসপত্রের প্রাধান্য বেড়ে যাওয়ার ফলে মৃৎ শিল্পীরা তাদের পণ্য বিক্রি করতে সমস্যায় পড়ছেন। বাজারে আগের মতো মাটির জিনিসের চাহিদা না থাকায় মৃৎ শিল্পীদের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হয়ে উঠেছে।
এখনকার মৃৎ শিল্পীরা বলছেন, তাদের জীবিকা একেবারেই সংকটাপন্ন। যারা এই শিল্পে দক্ষ, তাদের অনেকেই পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকি, অনেক শিল্পী তাদের পূর্ব পুরুষদের শিল্পকর্মে জীবন কাটালেও এখন তাদের জীবন চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তবুও, তারা একে মনের মধ্যে স্বপ্ন দেখছেন যে একদিন হয়তো আবার মাটির পণ্যের কদর বাড়বে, এবং তারা ফিরে পাবেন তাদের হারানো ঐতিহ্য।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা মাগুড়া আকবরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী দেবেন্দ্রনাথ পাল জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ বাড়ছে। একই সাথে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, যার কারণে অনেক মৃৎ শিল্পী লোকসান গুনছেন।
শ্রী ভবেশ মালাকার, একজন অভিজ্ঞ মৃৎ শিল্পী, বলেন, "আমরা যদি আধুনিক প্রশিক্ষণ এবং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মৃৎশিল্পের সমপযোগী জিনিসপত্র তৈরি করি এবং বিদেশে বাজার সৃষ্টি করতে পারি, তাহলে এই শিল্পটি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।" তার মতে, মৃৎশিল্পের বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা এই শিল্পের রক্ষাকল্পে অত্যন্ত জরুরি।
এখনো আত্রাইয়ের মৃৎ শিল্পীরা স্বপ্ন দেখেন, একদিন হয়তো তাদের শিল্প আবারও জনপ্রিয় হবে। তবে, তাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা এবং বাজার সম্প্রসারণের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।