নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা বর্তমানে এক ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানার অবহেলা এবং উদাসীনতার কারণে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বদলগাছী উপজেলা, যা নওগাঁ জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা, ১৭ কিলোমিটার দূরত্বে জেলা সদর থেকে অবস্থিত। অথচ এখানকার ৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম একাধিক সমস্যায় আটকে রয়েছে।
গত ২০ এপ্রিল, রবিবার সকাল ৯টায় বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভীড় জমে যায়। রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাচ্ছিলেন না। কিছু রোগী, যাদের হাতে ও পায়ে ব্যথা ছিল, তারা চিৎকার করলেও কেউ তাদের সেবা দিচ্ছিল না। অথচ ওই সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কানিজ ফারহানা অফিসে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি জানান, দাপ্তরিক কাজের জন্য মাঝে মাঝে তাকে বাইরে থাকতে হয়, কিন্তু তার অনুপস্থিতি রোগী ও চিকিৎসকদের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ডাঃ কানিজ ফারহানা ২০২২ সালের ১৪ মার্চ থেকে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে আছেন। তবে তিনি প্রায়ই অজুহাতে অফিসে অনুপস্থিত থাকেন। নভেম্বর মাসে ১০ দিন এবং ডিসেম্বর মাসে ১৮ দিন তিনি অফিসে আসেননি। এমনকি, অফিসে দেরি করে আসা এবং ব্যক্তিগত কাজে সরকারি গাড়ি ব্যবহারের বিষয়েও অভিযোগ উঠেছে। আরও চরম অবস্থা হচ্ছে, এই কর্মকর্তা গত এক বছরে কোনো সেবা না পাওয়ার কারণে, এ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ হয়ে গেছে এবং হাসপাতালের মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, হাসপাতালের রাজস্ব খাতের ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ কোনো মামলা দায়ের করেনি। এছাড়া, টিকিট কাউন্টারে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। যদিও এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে ডাঃ কানিজ ফারহানা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, চুরির বিষয়ে থানায় জিডি করেছেন এবং পুলিশ তদন্ত করছে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি সাবধান করেছেন এবং অফিসে দেরি করার বিষয়টি দাপ্তরিক কাজের জন্য হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন।
এখন, নওগাঁর সিভিল সার্জন ডাঃ মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি নতুন দায়িত্বে এসেছেন এবং বায়োমেট্রিক হাজিরা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
এভাবে, উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা অব্যাহতভাবে অবহেলিত হতে থাকলে স্থানীয়দের জন্য সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না, এমন আশঙ্কা করছে সচেতন মহল।