অন্ধত্বের মাঝে স্বাভাবিক জীবনযাপন: আরশাদ আলীর অদম্য জীবনযুদ্ধ

ঝিনাইদহের কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা আরশাদ আলী, দুই চোখের অন্ধত্ব সত্ত্বেও, জীবনযুদ্ধে হার মানেননি। গুটি বসন্তের কারণে মাত্র ছয় বছর বয়সে চোখের আলো হারিয়ে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তবে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তার জীবনযাত্রায় কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবল দিয়ে তিনি সংসারের সকল কাজ নিজেই পরিচালনা করছেন। তিনি প্রতিদিন গবাদি পশুর জন্য ঘাস কাটেন, বাজার সদাই করেন, সংসারের অন্যান্য কাজকর্মও সম্পন্ন করেন। এই সমস্ত কাজগুলো তিনি একা, সম্পূর্ণভাবে নিজ উদ্যোগে এবং শুধুমাত্র অনুভূতির মাধ্যমে করেন।

আরশাদ আলীর মা, আইজান নেছা জানান, তাঁর সন্তান ছোটবেলায় চোখ হারানোর পর অনেক কষ্টে বড় হয়েছেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে তিনি এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। আরশাদ আলী জানালেন, ছোটবেলায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে তাঁর চোখ দুটি অন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭২ সালে গুটি বসন্ত মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সেই সময়ে অন্ধত্ব তাঁর জীবনকে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তবে এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই তাঁর মনোবল ভেঙে দেয়নি।

হলিধানি ইউনিয়নের মেম্বর সাদ আহম্মেদ বলেন, প্রতিদিন সকাল বেলা আরশাদ আলী গবাদি পশুর জন্য ঘাস কাটতে মাঠে যান। দীর্ঘ পথ পার হয়ে তিনি একাই বাড়ি ফিরে আসেন। এসব কাজ করতে গিয়ে কখনো কারো সাহায্য নেন না। তিনি সম্পূর্ণভাবে অনুমানের উপর নির্ভর করে তার পথ চলেন। রামনগর গ্রামের সমাজকর্মী জহির রায়হানও আরশাদ আলীর জীবনযাত্রা দেখে মুগ্ধ। তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি দুই চোখ হারিয়েও কীভাবে নিজের কাজ নিজে করতে পারে, তা দেখে তিনি অবাক হয়েছেন।

আরশাদ আলী বলেন, "চোখের আলো নেই, তাতে কী? আল্লাহ তো আমার হাত, পা, মুখ সব কিছুই দিয়েছেন।" তাঁর মতে, শারীরিক অক্ষমতা এক ধরনের পরীক্ষা, আর সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করেই সেই পরীক্ষা সহজেই উত্তীর্ণ হওয়া যায়। তাঁর জীবনযাত্রা প্রমাণ করে যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যত বড়ই হোক, ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল দিয়ে সবকিছু জয় করা সম্ভব।

এটা স্পষ্ট যে, আরশাদ আলীর মতো মানুষরা আমাদের শেখায় যে, জীবনের কোনো কষ্ট বা প্রতিবন্ধকতা আমাদের পথে থামাতে পারে না, যদি আমাদের মনোবল শক্তিশালী এবং আত্মবিশ্বাসী হয়।