প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:১৭
মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশনে ভাঙচুর করেছেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও কল্যাণ শ্রমিক ইউনিয়ন মঙ্গলবার ভোর থেকে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়, যা যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার পর যাত্রীরা নিজেদের টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে স্টেশন থেকে চলে যান।
রাজশাহী রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফয়সাল বিন আহসান জানান, সকাল ৬টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। যাত্রীরা যাত্রা শুরু করতে এসে ট্রেন না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর তারা স্টেশনের চেয়ার ও অন্যান্য সামগ্রী ভাঙচুর শুরু করেন। ঘটনাটি স্থানীয় পুলিশ বাহিনী দ্রুত সামলায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘ সময় ধরে টিকিট কিনে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন, কিন্তু কোন ঘোষণা ছাড়াই ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আগে থেকে ট্রেন বন্ধের ব্যাপারে জানিয়ে দেয়নি, যার কারণে তারা দুর্ভোগের শিকার হন।
স্টেশনের একাধিক যাত্রী জানান, ‘টিকিট বিক্রি করা হলেও কোনো ট্রেন ছাড়েনি, যা আমাদের জন্য বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না, তাই ক্ষোভের সঙ্গে আমরা স্টেশনে ভাঙচুর করেছি।’
এ ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে শাস্তির দাবি জানানো হয়। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলেছেন, এমন আচরণের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
এর আগে রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল, যার অংশ হিসেবে তারা সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ কর্মসূচি কর্মস্থলে অবস্থান নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ছিল।
যাত্রীদের অভিযোগ, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি সম্পর্কে যথাযথভাবে জানানো হয়নি এবং তাদের ভোগান্তির বিষয়ে কোনো ধরনের সহানুভূতি দেখানো হয়নি। কিছু যাত্রী আরো জানান, তাদের পরবর্তী যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে এবং এ কারণে তারা বিপদে পড়েছেন।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এই ভাঙচুরের ঘটনা একে একে সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা স্থানীয় প্রশাসন এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জন্য বড় একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হলেও, ক্ষুব্ধ যাত্রীদের শান্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এ ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, আগামীদিনগুলোতে যাত্রীদেরকে কোনো ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি না করতে এ ব্যাপারে সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়াও, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যাত্রীদের ক্ষোভের কারণে কিছুক্ষণের জন্য স্টেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে, তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ভাঙচুরের ঘটনাটি স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে দেখবে।
এদিকে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই অপ্রত্যাশিত কর্মসূচির কারণে একদিকে যেমন যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি রেলওয়ে সার্ভিসের সুনামও নষ্ট হয়েছে। যাত্রীদের দাবি, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনসহ দেশের বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।