প্রকাশ: ৬ আগস্ট ২০২৪, ১:৫২
পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় বৈষম্যবিরোধী ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে ‘ছাত্র-শিক্ষকদের শান্তি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কলাপাড়া উপজেলাস্থ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার (০৬ আগস্ট) ১১ টায় পর্যটন হলিডে হোমস ও ইউথ ইনের হল রুমে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও কুয়াকাটার সাবেক শিক্ষার্থী এবং নানা শ্রেণীপেশার মানুষ এতে অংশ নেয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি সমন্বয়ক শহিদুল ইসলাম সৈকত, রফিকুল ইসলাম, রাকিব হাসান, গোলাম মাহমুদ সবুজ, ববি সমন্বয়ক খায়রুল ইসলাম সোহাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মো. ইমরান হোসেন, সাত কলেজ সমন্বয়ক জোবায়ের ইসলাম তালহা, তিতুমীর কলেজের মোহাম্মদ মহিম, বিএম কলেজ সমন্বয়ক জিনিয়া কাজী, ঢাবির ইমাম হাসান ইমনসহ কলাপাড়াস্থ শিক্ষার্থীদের আরো অনেকে।
এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক মোঃ ইমরান বলেন, আমরা কোন দলের নয়, আমরা দেশের ছাত্র, যেখানে অন্যয় সেখানেই প্রতিবাদ, আমরা কোন রাজনৈতিক দলের ফায়দা নিতে আন্দোলন করিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক জিএম সবুজ বলেন, আমরা এই অরাজকতা ও সংহিতা করার জন্য রক্ত দেইনি। একটি মহল তারা ফায়দা নিচ্ছে। এটি মোটেই কাম্য নয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক খায়রুল ইসলাম সোহাগ বলেন, আমাদের অনেক ভাইয়ের জীবেনর বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচারী সরকারের পতন করতে সক্ষম হয়েছি। তাই আমরা সেই ভাইদের স্মরণ করছি।
বরিশাল ব্রজমহন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক জিনিয়া গাজী বলেন, দেশ কারো বাপের না, কারো স্বামীর না। নানা মতের নেতাকর্মীকে উদ্দেশ্য করে করে বলেন, বিজয়ের নামে যা করতেছেন এটি আমরা চাই না। আমরা চাই শান্তি। কেউ বিজয়ের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ কিংবা কোনো নাগরিকের সম্পদ নষ্ট করলে তাদের বিরুদ্ধে আবারো সংস্কার কাজ শুরু করবে দেশের ছাত্র জনতা। আমরা এক স্বৈরাচার পতন করে আবারো দেশে স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে দিবনা কাউকে। কেউ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করলে আমরা বসে থাকবো না। মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আমরা সার্বক্ষণিক পাহাড়া দিবো। এবং কোনো দুষ্কৃতিকারী যদি ছাত্র সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য কোনো প্রকার অপ্রতিরোধ্য ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে। এবং তাদের তালিকা করে প্রত্যককে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা প্রতিটি সহিংস ঘটনার, হামলার তদন্ত করে একটি তালিকা প্রস্তুত করছি বলেও জানান এই সমন্বয়ক।
কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সিএম সাইফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দিন বাবুল, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান, আবু হানিফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান সোহেল, সহকারী শিক্ষক আলহাজ্ব মাঈনুল ইসলাম মন্নান, কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সম্পাদক হোসাইন আমীর সহ মহিপুর থানার বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ। অনুষ্ঠানের নিহতদের স্বরনে এক মিনিট নিরবতা শেষে, দোয়া ও মিষ্টি বিতরন করা হয়। শান্তি সমাবেশ শেষে একটি প্রতিবাদ মিছিল ও চলমান সহিংসতা বন্ধে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি কুয়াকাটা পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে কুয়াকাটার, আলীপুর, মহিপুর, পাখিমারা, ধুলাসার, বাবলাতলা সহ কলাপাড়া উপজেলা সদরে বিজয় মিছিলের নামে ব্যপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সেনাবাহীনির সহায়তায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও পুরো উপকূল এলাকাজুরে বিরাজ করছে এক চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। আ. লীগ নেতা কর্মীদের বাসা, আবাসিক হোটেল, ব্যবসায়ীক স্থাপনা ভাংচুর সহ বেশ কিছু নেতাকর্মীর বাড়িতে লুটপাট, স্থাপনায় ঝুলানো হয়েছে তালা, বেশ কয়েকজনের বাড়িতে দেয়া হয় আগুনও। এমন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সেনা সদস্যদের পাশাপাশি তা নিয়ন্ত্রনে স্থানীয় সাংবাদিক, শিক্ষক, সাধারন ছাত্রদের প্রচেষ্টায় পরিবেশ কিছুটা শান্ত করা গেলেও উত্তেজনা থেমে থেমে বেড়েই চলছে। স্থানীয়রা জানান, তাদের নৈতিকতা থেকেই চলমান পরিস্থিতি শান্ত করতে নিজ নিজ প্রচেষ্টায় কাজ করার আশ্বাস দেন।