প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ৩:১২
আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থীর তিনজনই আওয়ামী লীগের নেতা। দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় উপজেলাটিতে নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলীয় নেতাদের দিয়ে ‘স্বতন্ত্র ফর্মুলায়’ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করানোয় স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে আশাশুনি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে।
প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আশাশুনি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এড. শহীদুল ইসলাম পিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম ও ব্যবসায়ী গাউছুল হোসেন রাজ। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী, আশাশুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি জিএম আল ফারুক, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি এনএমবি রাশেদ সরোয়ার শেলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি এসএম সাহেব আলী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসমাউল হুসাইন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোসলেমা খাতুন মিলি, আশাশুনি সদর ইউনিয়নের সাবেক মহিলা মেম্বর মারুফা খাতুন, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সীমা পারভীন ও মেহেরুন্নেছা খাতুন ।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের এবারের নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এ জন্য উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তিন পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলীয় নেতাদের নিয়ে স্বতন্ত্র ফর্মুলায় উপজেলার নির্বাচন মাঠপর্যায়ে দলীয় কোন্দল আরও প্রকট হচ্ছ বলে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।নেতা কর্মীরা আরও জানান দলের তিন নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের সবার কমবেশি কর্মী-সমর্থক আছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তিন পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের তিন নেতার যে কেউ হয়তো জিতবেন। কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মীদের কোন্দল কমবে না, বরং আরও বাড়বে।এ উপজেলা বিগত ৩টি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মোস্তাকিম। প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও সর্বশেষ নির্বাচিত হয়েছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে।
মোস্তাকিমের দুর্গে হানা দিতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে মাঠে নেমেছেন এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম। আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম ছিলেন খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। প্রথমবার সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও পরবর্তী দুবার তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন।
অন্যদিকে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টুও আটঘাট বেঁধে নেমেছেন মাঠে। অ্যাড. শহিদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাতক্ষীরায় গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আইনজীবী। এ জন্য তিনি দলের কেন্দ্র থেকে আশীর্বাদ পাবেন বলে প্রত্যাশা তার নেতাকর্মীদের। অপর দিকে এবারের উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ শিল্পপতি আলহাজ গাউসুল হোসেন রাজ। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তবে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চমক দেখানোর প্রত্যাশা তার নেতাকর্মীদের।
জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে আসলে আওয়ামী বিরোধিতার কারণে সেই ভোটের পাল্লা গাউসুল হোসেন রাজের দিকে ঝুঁকতে পারে বলে মনে করেন ভোটাররা।দুজন হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম। অন্যজন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম। দুজনেই নিজেদের শক্তি সামর্থ্য জানান দিতে মাঠে রয়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের প্রচার, পাল্টাপাল্টি মিটিং ও শোডাউন।
বিশেষ করে মোটরসাইকেলে শোডাউন চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়ে এ দুই প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে চলছে একধরনের স্নায়ু যুদ্ধ। যে কোনো সময় এই টানটান স্নায়ু যুদ্ধ রূপ নিতে পারে সংঘর্ষে। মফিজুল ইসলাম নামে একজন ভোটার জানান, যে নেতা সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে চলবেন তেমন কাউকে তারা বেছে নিতে চান। বিচারপ্রার্থীরা যেন নায্য বিচার বঞ্চিত না হয় এমন প্রার্থীকে তারা ভোট দেবেন।
ভোটারদের মধে আগ্রহ কম-উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন সব দলের অংশগ্রহন না থাকায় ভোটাররা কিছুটা হতাশ। তবে তিন প্রার্থী ও তাদের উজ্জীবিত কর্মী সমর্থকরা শেষ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পরিমান ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।প্রার্থীরা প্রতীক পেয়েই ব্যাপক প্রচার প্রচারণা, সভা সমাবেশের পাশাপাশি বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভোট চাওয়া ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার প্রার্থীরা বেশি বেশি উঠান বৈঠক করে। এতে করে ভোটারদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলার চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিম বলেন, আশাশুনির মানুষ আমাকে ভালোবাসে। ইতোপূর্বে আমার দায়িত্ব পালনে মানুষ সন্তুষ্ট হওয়ায় আমাকে তিনবার নির্বাচিত করেছে। আল্লাহর রহমতে ও মানুষের ভালোবাসায় এবার আরও বেশি ভোটে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। খাজরা ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছি। এই ইউনিয়ন বাদে অন্যসব ইউনিয়ন ঝুঁকিমুক্ত বলে জানান তিনি।সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হলে আমার জয় নিশ্চিত। মানুষ আমাকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। এখনো পর্যন্ত সব কিছু ঠিক ঠাক চলছে।
তবে প্রতাপনগর, আনুলিয়া ও বড়দলের কয়েকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে প্রশাসনের লোক বাড়াতে হবে, যেন কেউ ভোট কাটাকাটি সাহস না দেখায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বললেন, নির্বাচনী প্রচারণার শেষ মূহূর্তে নানা হিসাব—নিকাশ মেলাচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। দলীয় প্রতীক বা সমর্থনে প্রার্থী না হওয়ায় শেষ সময়ে অঞ্চল, সমাজ এবং সম্প্রদায় ভিত্তিক প্রচারণাও দেবার চেষ্টা করছেন কোন কোন প্রার্থী। প্রচারণার দৌড়ে এই উপজেলায় তিন প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন।
এরা হলেন এবি এম মোস্তাকিম, এস এম শাহনেওয়াজ ডালিম,এ্যাড শহিদুল ইষলাম পিন্টু।এই উপজেলার কিছু কেন্দ্রে ভোট কারচুপির আশংকা করে আগে ভাগে ব্যবস্থা নেবার দাবী জানিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত দিয়েছেন প্রার্থীরা।উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শম্ভুজিৎ মন্ডল বলেন, আশাশুনিতে অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা বর্তমান সরকার প্রধান প্রত্যাশা করছেন।আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিশ্বজিত অধিকারী বলেন, ‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সজাগ রয়েছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
আশা করি ভোটের দিনেও শান্তিপূর্ণ থাকবে।
’আশাশুনির ১১ টি ইউনিয়নের মোট ভোটার ২ লক্ষ পাঁয়ত্রিশ হাজার ৫ শ ৫৪ জন।এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ১৯ হাজার ৮শত ০৩ জন মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৭শত ৯১ ।আর হিন্দু ভোটার রয়েছেন ৬৭ হাজারের মত।৬৭ হাজার ভোটের য়ে আয়াত্বে আনতে পারবে তার জয় সুনিশ্চিত।