
কুয়াকাটায় উচ্ছেদের প্রতিবাদে শত শত মানুষ রাস্তায়

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০:৫

গুড়িয়ে দেওয়া বসতভিটা আকরে ধরে এখনও খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে উচ্ছেদ হওয়া ৪ শতাধিক পরিবার। উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনও আশায় বুক বেধেঁ আছে জন্মভূমির মায়ায়। থাকার বিকল্প জায়গা নেই। চলছে না রান্না-বান্নাসহ গোসল। পানির গভীর নলকূপও ভেঙ্গে দিয়েছে প্রশাসন। খালি ভিটায় মালামাল নিয়ে বসে আছেন।
অভুক্ত মানুষগুলো শিশু সন্তান নিয়ে শীতেও কষ্ট পাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধারা ঠান্ডা জনিত রোগে ভুগছেন। স্কুলে যাচ্ছে না বেশিভাগ শিশুরা। এমন সব অভিযোগ নিয়ে ১৬ নভেম্বর (বুধবার) বেলা ১১ টায় কুয়াকাটা পৌরসভার হুইছান পাড়া ও পাঞ্জুপাড়ার হাজারো মানুষ মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে। প্রায় আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধজুড়ে শিশুসহ ভুক্তভোগী ওইসব মানুষগুলোর মাঝে দেখা গেছে চাপা কান্নার শব্দ।

মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী মানুষগুলোর দাবী পুর্ণবাসন। তাদের দাবী বাপ দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে কোথায় গিয়ে থাকবেন তারা। খোলা আকাশের নিচে বেড়া দিয়ে, তাবু টানিয়ে গত তিনদিন ধরে বসবাস করছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ কেউ তাদের পাশে দাড়ায়নি। খোঁজখবর নেয়নি প্রশাসনও। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষদের দাবী উচ্ছেদ হওয়া এই ভূমি তাদের। পুর্ণবাসন না হওয়া পর্যন্ত তারা কোথাও যাবেন না। আর যাওয়ার জায়গাও নেই তাদের। মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী সকলের দাবী প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদেরকে যেন পুর্নবাসন করা হয়।
ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন কর্মসুচিতে অংশ নেয়া পাঞ্জুপাড়ার ভুক্তভোগী আব্বাস কাজী, আঃ ছত্তার, নিজাম, লতিফ মিস্ত্রী, হোসেন পাড়া গ্রামের আঃ রহিম হাওলাদার, বেল্লাল খলিফা ও মোহাম্মদ হানিফ বলেন, কোন প্রকার আগাম নোটিশ বা সময় না দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে বাড়িঘর। প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে না উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর। হোসেনপাড়া গ্রামের আছিয়া, ছফুরা বেগম ,কহিনুর বেগম, মমতাজ ও কুলসুমরা বলেন, মোরা কই যামু কন। ৫০-৬০ ধরে মোরা এই য্যায়গায় থাহি।

মোগে যাওয়ার আর যায়গা নাই। মইর্যা গেলেও এই য্যায়গা ছাইরা যামু না।
শতবর্ষী আলী আকবর। ১১ সন্তানের বাবা। তার জীবন যৌবন পার করেছেন সমুদ্রের পাড়ে। গোটা পরিবারই সমুদ্র কেন্দ্রীক জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। সমুদ্রের পাড়েই পরিবারের কবর। ভুমীহীন আলী আকবর উচ্ছেদের পর থেকে খালি ভিটা আকড়ে ধরে পড়ে রয়েছে। আলী আকবর বলেন, তিনি এখন মুত্যু পথযাত্রী। পুর্নবাসন না হলে মরন ছাড়া আর উপায় নেই।
হাসেনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব হাওলাদার বলেন, উচ্ছেদকৃত পরিবাগুলোর শিশুরা ক্লাশে আসছেনা। উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার কথা বলে তিনি শিশুদের স্কুলেমুখী করার চেস্টা করে যাচ্ছেন। অপর এক সহকারী শিক্ষক সোহরাব হোসেন মিন্টু বলেন, খোলা আকাশে নিচে বসবাস করায় দূর্ভোগে পরিবার গুলো। ঠান্ডা জনিত রোগে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।

কুয়াকাটা পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিল মোঃ ছাবের হোসেন বলেন, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর অধিকাংশই ভূমিহীন। বর্তমানে খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থানের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
উচ্ছেদ হওয়া ৪ শতাধিক পরিবার কেমন আছে এমন প্রশ্নের জবাবে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন,খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন শত শত মানুষ। পৌরসভার নিজস্ব জমি না থাকায় সহসাই পুর্ণবাসন সম্ভব নয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর পুর্ণবাসন প্রকল্পের অধীনে পুর্ণবাসনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি আরও বলেন,ব্যাক্তি উদ্যেগে দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন এছাড়া তার আর কিছুই করার নেই।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, উচ্ছেদ হওয়া পরিবার গুলোর খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রকৃত ভূমিহীন তালিকা প্রননয়নের কাজ চলছে। পর্যায়ে ক্রমে পুর্ণবাসন করা হবে।

সর্বশেষ সংবাদ
