প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২২, ১৭:১১
বিয়ের গেট পছন্দ না হওয়ায় ডেকোরেটর কর্মীকে মারধর এবং পরবর্তী সংঘর্ষের জেরে গ্রেপ্তার আতঙ্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের দৌলতপুর ও সীতারামপুর গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে সীতারামপুর বাজারে হামলা, ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় গত বুধবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে বিবদমান দুই গ্রামের ৯শ’র বেশি মানুষকে আসামি করে পুলিশের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর থেকে এলাকাজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রেপ্তার এড়াতে দৌলতপুর এবং সীতারামপুর বাজারের দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অন্য এলাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গ্রামের পুরুষরা।
স্থানীয়রা জানান, সীতারামপুর গ্রামের জিন্নাত আলীর মেয়ের বিয়ের সাজসজ্জার দায়িত্ব পান পাশের গ্রাম দৌলতপুরের সোহেল মিয়া। তবে তার করা গেটের ডিজাইন পছন্দ না হওয়ায় ডেকোরেশন কর্মী সোহেলের সঙ্গে ১৪ আগস্ট কনের দুই ভাই রাজু ও রুমানের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা সোহেলকে মারধর করেন। পরে মারধরের ঘটনার জেরে ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় দৌলতপুর ও সীতারামপুরের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
সংঘর্ষ চলাকালে সীতারামপুর বাজারের দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। খবর পেয়ে নবীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার পর বুধবার নবীনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইমরান বাদী হয়ে শতাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৮শ’ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর দুই গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। গ্রামবাসী পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বাণিজ্য ও হয়রানিরও অভিযোগ করেছেন।
দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, পুলিশ এসে গ্রামে মানুষদের ধরে নিয়ে যায়। আবার ধরার পর পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দিলে ছেড়ে দেয়। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন না।
হাবিব মিয়া নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, দুই পরিবারের ঝগড়ার কারণে আমরা পুরো গ্রামের লোক এখন কষ্ট ভোগ করছি। রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। পুলিশ ধরে একদিকে, ছাড়ে আরেকদিকে। সকালে আমার ভাই অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে ছিল। পুলিশ তাকে ঘরে এসে ধরে নিয়ে গেছে।’
গ্রাম পুলিশ সদস্য মনিলাল জানান, দুই গ্রামের বাসিন্দাদের সংঘর্ষের জেরে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এখন দুই গ্রামে যে পুরুষ লোক পাবে তাকেই ধরবে পুলিশ। অজ্ঞাত প্রায় আটশ’ লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাই দুই গ্রামে এখন পুরুষ লোক নাই বললেই চলে।
ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি আমজাদ হোসেইন আশরাফী বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। বর্তমানে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
নবীনগর থানার এস আই মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কোনও বিশৃঙ্খলা নেই। যারা ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলায় কনের বাবা জিন্নাত আলীকে প্রধান আসামি করে ১২৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮০০ জনকে আসামি করে পুলিশ মামলা করেছে।