প্রকাশ: ২ জুন ২০২২, ০:১
দীর্ঘ নয় মাস আগে একটি মারামারি মামলায় গ্রেফতার হয় পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের পুইজোর গ্রামের ইসলাম মন্ডল (৪০)। আজ বুধবার তার জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। সেই জামিন শুনানির জন্য রাজবাড়ী আদালতে আসছিলেন ইসলাম মন্ডলের মা মছিরন নেছাসহ তার মেয়ে ও নাতনিরা। সকালে গ্রামের বাড়ী থেকে নাসির মিয়ার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে আদালতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কালুখালীর চাঁদপুর আসার পর রাজবাড়ী থেকে আসা ঢাকা মেট্রো-গ-২৯-৮১৩৯ নামের একটি দ্রুতগতির ট্রাক তাদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং কালুখালী উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্স আরও তিনজন মারা যায়। অটোরিকশায় থাকা আহতদের মধ্যে দুর্ঘটনায় মর্জিনা বেগম ও আহম্মদ শেখ গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে বিকালে মর্জিনা বেগমকে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা রেফার করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মুছিদাহ বনগ্রামের বছির উদ্দিনের ছেলে (ইজিবাইক চালক) নাসির উদ্দিন মিয়া(৩৫), একই গ্রামের গ্রামের মোতালেব শেখের স্ত্রী মছিরন নেছা (৬০)। কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের নগর বাথান গ্রামের মুকুলের দুই ছেলে নয়ন(৯) ও ইউসুফ(৮)। একই উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বাস্তখোলা গ্রামের হেলাল বিশ্বাসের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৪০) ও তার মেয়ে শিলা(২০)।
নিহত মছিরন নেছার বড় ভাই মো. আক্কাস আলী জানান, তার ভাগনে ইসলাম একটি মারামারি মামলায় ৯ মাস রাজবাড়ী জেলা কারাগারে আটক আছেন। বুধবার সকালে পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়ন থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে তার বোন মছিরনসহ পরিবারের সদস্যরা ইসলামকে জামিন শুনানির জন্য রাজবাড়ী জেলা কারাগারে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কালুখালী চাঁদপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকের চাপায় মছিরনসহ তাদের পরিবারের পাঁচ জন প্রাণ হারান। শুধু বেঁচে যান মছিরনের মেয়ে মর্জিনা ইসলামের ভাই আহম্মদ। তবে মর্জিনার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তিনি আরো বলেন, আজ দুপুরে রাজবাড়ী বিজ্ঞ আদালত ইসলাম মন্ডলকে জামিন দিয়েছেন। কিন্তু জামিন নিয়ে নিজ হাতে মাটি দিতে হবে একে এক ছয় পাঁচজনকে।
নিহত শিলার ভাই মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, নিহত মছিরন বেগম তার ছেলে ইসলাম শেখের জামিন ধরাতে ইজিবাইক যোগে রাজবাড়ী আদালতে রওনা হন। এ সময় মছিরণ বেগম তার দুই মেয়ে মরিয়ম বেগর (আমার চাচি), মর্জিনা বেগম ও তার ছেলে আহম্মেদ শেখ। মছিরণ বেগমের নাতনি (আমার চাচাত বোন) শিলা, নয়ন ও ইউসুফকে সাথে নিয়ে যান। রাজবাড়ীতে যাবার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার চালক রবিউল ও যাত্রী
সঞ্জু সরকার বলেন, তারা ব্যক্তিগত গাড়িতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। কালুখালীর ওই এলাকায় তারা ইজিবাইকের পেছনে ছিলেন। বিপরীত দিক থেকে একটি দ্রুতগতির ট্রাক আসে। ইজিবাইক ট্রাক দিকে সাইড দেয়। কিন্তু ট্রাকটি ইজিবাইককে সাজোরে ধাক্কা ইজিবাইক একদম দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ সময় তাদের গাড়ির চালক ডান দিকে বের হওয়ার চেষ্টা করে। ট্রাকটি ডান দিকে চলে আসায় তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির সামনের অংশ ট্রাকের নিচে ঢুকে যায়।
প্রানে বেঁচে যাওয়া ইজিবাইকে থাকা আরেক যাত্রী শাহিন আহমেদ জানায়, সে সহ সকল যাত্রী রাজবাড়ী কোর্টে যাচ্ছিল। ঘাতক ট্রাকের বেপরোয়া গতি দেখে সে দূর্ঘটনার পূর্ব মূহুর্তে লাফ দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। তিনি আরো বলেন, আমি হয়ত লাফ না দিলে আজ বাড়িতে লাশ হয়ে ফিরতাম।
প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল থেকে রাজবাড়ীতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। এর মধ্যে
রাজবাড়ীর দিক থেকে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক অটোরিকশাটিকে সজোড়ে ধাক্কা দিলে তা দুমড়ে মুচড়ে যায়। তার পেছনেও থাকা সাদা প্রাইভেটকারটি আর বেড়োতে পারেনি। তবে ট্রাকের গতি কম থাকলে আজ এতো বড় দূর্ঘটনা ঘটতোনা। একই পরিবারের স্বজনসহ ৫জন নিহত হওয়াতে ওই এলাকার শোকের ছাড়া নেমে এসেছে।।
রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, আজ বুধবার সকাল ৯ টার দিকে কালুখালী ফায়ার সার্ভিসের সামনে ট্রাক, অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষের খবর শোনা মাত্রই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করি। এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ৪ জনকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩ জন মারা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য বলেন, দুর্ঘটনার কারণ মূলতো ট্রাকের বেপোরোয়া গতি। দ্রুতগতির কারণেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
কেন এই সড়ক দূর্ঘনাটি ঘটেছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সাধারণ সড়কে যানবাহন গুলো ধীরে চলাচল করলে দূর্ঘটনা কম ঘটে।এছাড়া অনেক চালকের অদক্ষতার জন্য বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কালুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হাসান বলেন, দুর্ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়েছেন। থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধারপরের পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরোও তিনজন মারা গেছে। আহত ব্যাক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। নিহতদের মরদেহ স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পাংশা হাইওয়ে থানা পুলিশ।
উল্লোখ্য, আজ বুধবার (১ জুন) সকাল ৯টার দিকে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার চাঁদপুর এলাকার ট্রাক, অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের ত্রিমুখী সংঘর্ষে অটোচালকসহ একই পরিবারের ৬ জন নিহত হয়।