প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২২, ২৩:৩৬
দেবীদ্বারে কৃষি জমির মাটি পুড়ছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের ইট ভাটার আগুনে। নিয়ম-বহির্ভূতভাবে মাটি ব্যবসায়ি এক যুবলীগ নেতা কর্তৃক প্রবাহমান খালে বাঁধদিয়ে সড়ক নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ঘটনায় ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ গিয়াস উদ্দিন অভিযান চালিয়ে খাল ভরাট ও ফসলী জমির মাটি কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করার অভিযোগে ২০১০ সালের বালু মহাল আইনে মাটি ব্যবসায়িকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে ১ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ডাদেশ দিলে টাকা পরিশোধে ছাড়া পান।
পোনরা গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, ইটভাটার মালিক এবং মাটি বিক্রেতা ও মাটি বিক্রয়ের দালাল’র নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট শাকতলা মাঠের প্রায় একশত একর জমির মাটি বিক্রয়ের পরিকল্পনা করেছে।
তিনি বলেন, দেবীদ্বারের অধিকাংশ ইটভাটায় ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ কেহই মানছেনা। দেবীদ্বারে প্রায় ২৯টি ইটভাটা থাকলেও অধিকাংশ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রই নাই।
রাজনৈতিক প্রভাবে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে অধিকাংশ ইটভাটায় আবাদী জমির উর্বর মাটিগুলো পুড়ছে। এতে ফসলী জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। শুধু তাই নয়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে অধিকাংশ ইটভাটা নির্মাণ হচ্ছে আবাসিক এলাকায়, ইটভাটার বিষাক্ত কাল ধোয়ার প্রভাবে স্বাস্থ্য, পরিবেশই নয়, ফসল, ফল-ফলাদি, মৎস, পশু-পাখীসহ সমস্ত কিছুতে তার বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
সোমবার দুপুরে সরজমিনে যেয়ে দেখা যায়, ১০নং দক্ষিণ গুনাইঘর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড শাকতলা মৌজার শাকতলা মাঠ থেকে মাটি খননযন্ত্র (এক্সকেভেটর) ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যাওয়ার পথ তৈরি করতে ভরাট করা হয়েছে চলমান একটি সরকারি খাল।
জানাযায়, শাকতলা গ্রামের মোঃ আমির হোসেন ভূইয়া তার ৬০ শতাংশ জমির মাটি প্রতি বর্গফুট মাটি ৩ টাকা দরে বিক্রি করেছেন কুরুইন গ্রামের অবস্থিত ভাই ভাই ব্রিকস’র মালিক ১৬নং মোহনপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোঃ ময়নাল হোসেন’র নিকট।
এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা শাকতলা ভূঁইয়া বাড়ির মৃত; তোফাজ্জল হোসেন’র পুত্র আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, গত ৪ বছর যাবত আমাদের এ মাঠের আবাদী জমিগুলো বেকার পড়ে আছে। স্ক্রীমের আওতায় এ মাঠে অন্তত: একশত একর আবাদী জমি আছে। গভীর সেচ পাম্পের বৈদ্যুতিক পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অজ্ঞাতকারনে বিগত ৪বছর ধরে চালু করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় সাংসদ, ইউএনও, বিএডিসি, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের নিকট বার বার ধর্না দিয়েও কোন সুরাহা পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেই। মাটি বিক্রয়ের উপার্জিত অর্থও পাব, পাশাপাশি মৎসখামার তৈরী করে জীবীকা নির্বাহ করতে পারব। তাকে চলমান একটি খাল ভরাট করে সড়ক তৈরী করা এবং কৃষি জমির মাটি বিক্রি করে মৎস খামার করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে কোন উত্তর না দিয়ে খাল ভরাটের বিষয়টি ভাই ভাই ব্রিকস ফিল্ডের মালিকের কাজ বলে জানান।
মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টায় মুঠু ফোনে উপজেলার কুরুইন গ্রামে অবস্থিত ভাই ভাই ব্রিকস’র মালিক ১৬নং মোহনপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোঃ ময়নাল হোসেন’র সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ওই সংক্রান্তে বিস্তারিত আমার সন্তান ও ব্রিক্স কর্মচারিরা ভালো বলতে পারবে।
ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও দেবীদ্বার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, পোনরা কৃষি মাঠে মাটি কাটার বিষয়টি এবং খাল ভরাট করে সড়ক নির্মানের খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যেয়ে সত্যতা পাই। পোনরা ভূঁইয়া বাড়ির মৃত; তোফাজ্জল হোসেন’র পুত্র আমির হোসেন ভূঁইয়া এ ঘটনার দায় স্বীকার করলে তাকে ২০১০সালের বালু মহাল আইনে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করি, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ডাদেশ দেই। আমির হোসেন ভূঁইয়া ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করে ছাড়া পান। এসময় আবাদী কৃষি জমি থেকে মাটিকাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভরাট করা খাল পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেই।